kill

শরিকি বিবাদের জেরে বহরমপুরে খুন দুই ভাই

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামে কাজেমের দেহ কবর দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলছেন, ‘‘পুরনো বিবাদের জেরে দুই ভাই খুন হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযোগ পেয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:৪৯
Share:

শোক ভেঙেছে পরিবারে । ছবি: ইন্দ্রাশিস বাগচী।

তিন কাঠা জমির উপরে পৈতৃক একতলা বাড়ি। তাই নিয়েই পুরনো বিবাদের জেরে বহরমপুরের কাঁঠালিয়া শেখপাড়ায় খুন হলেন দুই ভাই কাজেম শেখ (৫২) এবং সাজেম শেখ (৫০)। ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিবেশী বাবু শেখ। জানুয়ারির একেবারে শেষ দিকে এই বিবাদের জেরেই বাবু কাজেমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। কাজেমকে তখন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বুধবার তিনি গ্রামে ফেরেন। সে দিনই গ্রামে ‘বিচারসভা’ বসার কথা ছিল। সেখানেই যাওয়ার পথে একটি চায়ের দোকানের সামনে কাজেম শেখ আবার আক্রান্ত হন। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যান সাজেম। তিনিও আক্রান্ত হন। কাজেমের স্ত্রী সালেহা বিবি ও ছেলে মাক্কারুলও গুরুতর আহত হয়েছেন। করে। চার জনকে কর্ণসুবর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কাজেমকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। বাকি তিন জনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতেই সাজেমকে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বাবু ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা। ঘটনায় কাজেমদের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের নামও জড়িয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামে কাজেমের দেহ কবর দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলছেন, ‘‘পুরনো বিবাদের জেরে দুই ভাই খুন হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযোগ পেয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’

কাজেমরা পাঁচ ভাই। কাজেম স্থানীয় কাঠালিয়া হল্ট স্টেশনের কাছে রেলগেটে অস্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী। সম্প্রতি সেখান থেকে রেলের যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ ওঠে। কাজেমের এক ছেলে ইসমৎ শেখ বলছেন, ‘‘রেলের যন্ত্রাংশ চুরির সঙ্গে বাবু যুক্ত ছিল। বাবা সেটা গ্রামে জানাবেন বলেছিলেন। আর সে কারণেই বাবু জানুয়ারির শেষ দিকে বাবার উপরে হামলা করে।’’ যদিও কাজেমের মেয়ে সাহিদা বিবির দাবি, ‘‘জমি নিয়ে গন্ডগোলের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে।’’

Advertisement

মৃতের পরিবারের দাবি, তখনই পুলিশ ঠিক মতো ব্যবস্থা নিলে এই অঘটন ঘটত না। বুধবার বাড়ি থেকে ৫০ মিটার দূরে একটি চায়ের দোকানের সামনে কাজেমের উপরে আক্রমণ হয়। মৃতের মা ইফাতন বেওয়া বলেন, ‘‘যারা আমার দুই ছেলেকে খুন করল, তাদের ফাঁসি চাই।’’ সাহিদা বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে বাবু বাবাকে মেরেছিল। সেই ঘটনার মীমাংসা করতেই বুধবার বিকেলে গ্রামের মোড়ল জেকের শেখ সালিশি সভার নাম করে বাবাকে বিকেলে ডেকে নিয়ে যান। তারপরেই বাবু লোকজন নিয়ে এসে বাবা ও চাচাকে খুন করে।’’ যদিও জেকেরের দাবি, ‘‘বৈঠকস্থলে বাবু আসতেই কাজেমের দুই ছেলে অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়। বাবুরাও পাল্টা আক্রমণে নামে। তখন দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।’’

মৃত কাজেমের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে দোতলা বাড়িতে থাকে বাবু। স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বাবুর স্ত্রী মনা বিবির দাবি, ‘‘গতকাল আলোচনা শুরুর আগেই কাজেমের দুই ছেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে কাজেমদের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের উপর চড়াও হয়। তখন তাঁকে বাঁচাতে গেলে কাজেমের দুই ছেলে আমার স্বামীকে আক্রমণ করে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’

বৃহস্পতিবার বাবু শেখ সহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে বহরমপুরে থানায় অভিযোগ খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement