বেঞ্চে বসতেই উঠে গেল বাকিরা

বছর দুয়েক আগের কথা। সদ্য বিয়ে হয়েছিল। দিনমজুরি করে কোনও রকমে সংসার চলে। এরই মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হই। অনর্গল কাশি, দ্রুত ওজন কমছিল।

Advertisement

সুজয় শূর (যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী)

বল্লভপাড়া শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৮
Share:

বছর দুয়েক আগের কথা। সদ্য বিয়ে হয়েছিল। দিনমজুরি করে কোনও রকমে সংসার চলে। এরই মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হই। অনর্গল কাশি, দ্রুত ওজন কমছিল। গঙ্গা পেরিয়ে পড়শি বর্ধমান জেলার কাটোয়া হাসপাতালে যাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, আমার যক্ষ্মা হয়েছে।

Advertisement

তার পর থেকেই শুরু হল নয়া জীবন সংগ্রাম। এক দিকে সাময়িক ভাবে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। অন্য দিকে, গ্রামে একঘরে হয়ে যাই। যক্ষ্মা হয়েছে, এ কথা এলাকায় চাউর হতেই, সকলে যেন আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে শুরু করে। বেশ বুঝতে পারতাম আমি। চারপাশের অতি চেনা মানুষগুলোও আচমকা যেন অচেনা হয়ে গেল। বাড়িতে আমার বিছানার আশপাশে কেউ ঘেঁষতে চাইত না। আমার জন্য ঘটি-বটি-বাসন-কোসন আলাদা করে দেওয়া হয়। একে অসুস্থ, তার উপরে খাওয়ার পর বাসন আমাকেই ধুতে হতো। একবার এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলাম। এমন ভাব করল, যেন সে আমাকে চেনেই না। আসলে অসময়ে বোধহয় এ ভাবেই সকলে অচেনার ভান করে।

পাড়ার চৌরাস্তার মোড়ের একটা দোকানে প্রতিদিন বিকেলে চা-বিড়ি খেতে যেতাম। যক্ষ্মা হওয়ার পর সে দোকানে‌ যাওয়া বন্ধ গেল। আমি একদিন দোকানের বেঞ্চে গিয়ে বসেছিলাম। আমাকে দেখে ওই বেঞ্চে অন্য আর কেউ বসেনি। তখনই বুঝতে পারলাম, আমাকে ওরা এড়িয়ে চলতে চাইছে। গঙ্গার ঘাটে বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। কাউকে পাশে পাইনি। ব্যতিক্রম ছিল আব্দুল শেখ। আব্দুল ওই সময়ে মানসিক ও আর্থিক ভাবে আমার পাশে ছিল।

Advertisement

এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি। সে ভাবে কাজ করতে পারি না। আব্দুল ভাইয়ের মতো কয়েক জন মানুষের সাহায্যে কোনও রকমে চলে আমার সংসার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement