এলেম নিজের দেশে
Coronavirus

ঝাঁকে ঝাঁকে মশা যেন গিলে খেতে আসছে

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারগাড়ি ভাড়া করে সূর্য ওঠার অনেক আগেই পৌঁছে গেলাম আলুভা স্টেশনে। জানতে পারলাম সেখান থেকে সরাসরি এ রাজ্যে আসার কোনও ট্রেন নেই।

Advertisement

সইদুল ইসলাম

ডোমকল শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০২:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাত তখন দু’টো হবে। বন্ধুরা প্রায় যুদ্ধ করেই গভীর ঘুমটা ভাঙাল। বলল, ‘‘আজ জনতা কার্ফু, সূর্য ওঠার আগেই স্টেশনে পৌঁছতে হবে।’’ চোখ কচলে অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে গুছিয়ে নিলাম নিজের বাক্স প্যাঁটরা। আর তারপর অন্ধকারে শুরু হল পথ চলা।

Advertisement

গাড়ি ভাড়া করে সূর্য ওঠার অনেক আগেই পৌঁছে গেলাম আলুভা স্টেশনে। জানতে পারলাম সেখান থেকে সরাসরি এ রাজ্যে আসার কোনও ট্রেন নেই। ফলে বাধ্য হয়েই চেপে বসলাম ছত্রিশগড়ের বিলাসপুরগামী একটি ট্রেনে। শুনেছিলাম সেখান থেকেই ট্রেন বদল করে পৌঁছনো যাবে হাওড়ায়। ঘরে ফেরার স্বপ্ন দেখে বেশ আমেজ করেই ফিরছিলাম ট্রেনে, কিন্তু স্বপ্ন ভাঙল বিলাসপুর স্টেশনে পৌঁছে। জানতে পারলাম থেমে গিয়েছে গোটা দেশ। অজানা অচেনা ঠিকানায় পৌঁছে থমকে গেলাম আমরাও। স্টেশনে নেমে ভেবেছিলাম রাতটা স্টেশন চত্বরেই কাটিয়ে দেব, কিন্তু জনাকয়েক রেল পুলিশ এসে সটান জানিয়ে দিল, স্টেশনের ভেতরে থাকা চলবে না। বাধ্য হয়ে রাতের অন্ধকারে এক অচেনা এলাকায় আতঙ্ক নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম। আর বাইরে বেরোতেই খপ্পরে পড়লাম বেশ কিছু নেশাগ্রস্ত লোকের। এ যেন জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ অবস্থা।

একদিকে স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দিল, আর নীচে নেমে সেখানকার লোকজন বলছে, এখানে থাকা চলবে না। মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল। শেষ পর্যন্ত হাতে-পায়ে ধরে স্টেশনের বাইরেই রাতটা কোনওক্রমে কাটিয়ে দিলাম। ভোরের আলো ফুটতেই দেখা করলাম স্থানীয় থানায়, শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্যোগেই ঠাঁই হল একটা অনুষ্ঠান বাড়িতে। কিন্তু সেখানে ঢুকে দেখি মাকড়শার জালে ছেয়ে গিয়েছে ঘর। ফ্যান থাকলেও সেগুলো চলছে না, চারদিকে গুনগুন করছে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। মশার কামড়ে পরদিনও গোটা রাত জেগে কাটালাম আমরা। মাস দেড়েক সেই ঘরেই থাকলাম আমরা, ৪৯ জন পরিযায়ী শ্রমিক। শেষে উপায় না দেখে প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে একটা বাস ভাড়া করে মাঝ-রমজানে রওনা দিলাম আমরা। টানা দু'দিন ধরে বাসে আসতে গিয়েও একাধিকবার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে আমাদের। বিশেষ করে আমাদের রাজ্যের সীমান্ত এসে শারীরিক পরীক্ষার নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। রাজ্যে ঢুকেও নিস্তার নেই, এমনকি কৃষ্ণনগরে এসেও ঘণ্টাচারেক বাস দাঁড় করিয়ে রেখেছিল পুলিশ। রুজির টানে কাজ করতে গিয়েছিলাম ভিন রাজ্যে। অথচ ঘরে-বাইরে যে ব্যবহারটা পেলাম, তা দেখে মনে হচ্ছে বড় অন্যায় করে ফেলেছি!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement