প্রতীকী ছবি।
এত দিন পুজোর উদ্বোধনে দেখা যেত রুপোলি পর্দার নায়ক-নায়িকাদের। সামর্থ্যে না কুলোলে নিদেনপক্ষে ডাকা হত রাজনৈতিক নেতাদের। ভিন্ন রাস্তায় হাঁটলেন বহরমপুরের তপোবন কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। ১৯তম বর্ষে তাঁদের পুজোর উদ্বোধন করবেন একদল রূপান্তরকামী।
তপোবন কালীপুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা নীলেন্দু সাহা বলেন, ‘‘৬ নভেম্বর আমাদের পুজো উদ্বোধন করবেন রূপান্তরকামী নৃত্য শিল্পী কাজি আফতাব ও তাঁর সহযোগীরা। তিনি জানান, দিন কয়েক আগে এক বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হলে সদস্যেরা সকলেই এক কথায় রাজি হয়ে যান।’’ বহরমপুরে নৃত্যশিল্পী হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে রূপান্তরকামী ও সমাজকর্মী কাজি আফতাবের। তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা ওই দিন ৪৫ ফুটের কালী প্রতিমার উদ্বোধন করবেন। আফতাবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘খুবই আনন্দ হচ্ছে। এই প্রয়াস শুধু রূপান্তরকামীদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা নয়। এটা সমাজের পিছিয়ে পড়া সমস্ত মানুষের প্রতি স্বীকৃতি।”
প্রসঙ্গত, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় রূপান্তরকামীদের দিয়ে পুজো উদ্বোধনের দু’-একটি ঘটনা সামনে এলেও মুর্শিদাবাদে প্রথম। আগল ক্রমেই ভাঙছে। সমাজে রূপান্তরকামীদের যোগদান বাড়ছে। সম্প্রতি বহরমপুর পুরসভা কোর্ট বাজার এলাকায় রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা শৌচাগার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাসতিনেক আগে ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথরিটির তরফে জেলায় লোক আদালত বসানো হয়েছিল। সেই আদালতে দু’জন বিচারকের সঙ্গে বিচারক হিসেবে হাজির ছিলেন রূপান্তরকামী অরুণাভ নাথ। অন্য দুই বিচারকের সঙ্গে তিনিও কিছু মামলার নিষ্পত্তি করেছিলেন। তপোবন পুজো কমিটির সিদ্ধান্তে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা সাধু উদ্যোগ। শুধু পুজোর উদ্বোধন নয়, রূপান্তরকামীদের সামাজিক কাজেও যুক্ত করা হোক।’’ উদ্যোক্তাদের এই প্রয়াসকে কুর্নিশ জানিয়েছেন রূপান্তরিত কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ অধ্যক্ষ মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টিকে ‘অন্ধকারের মধ্যে নতুন আলো’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। মানবী বলেন, “আফতাবের মতো একজন সংখ্যালঘু রুপান্তরকামীকে দিয়ে পুজো উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই পুজো কমিটি সম্প্রীতির বার্তা দিল।’’