বিচারকের আসনে অরুণাভ

আলাম বলছেন, “পরে শুনলাম,  উনি মহিলা নন, কিন্তু মহিলা হতে চান। সমাজ এঁদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। কিন্তু বিচারক হিসেবে উনি তো চমৎকার কাজ করলেন। কিছু খামতি তো দেখলাম না!’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০১:০৩
Share:

ব্যাঙ্কের ঋণ সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তির জন্য বহরমপুরে লোক আদালতে এসেছিলেন নওদার ত্রিমোহনীর আলাম শেখ। তিন বিচারকের এক জনকে দেখে তাঁর একটু খটকাই লেগেছিল।

Advertisement

আলাম বলছেন, “পরে শুনলাম, উনি মহিলা নন, কিন্তু মহিলা হতে চান। সমাজ এঁদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। কিন্তু বিচারক হিসেবে উনি তো চমৎকার কাজ করলেন। কিছু খামতি তো দেখলাম না!’’

একই রকম খটকা লেগেছিল খাগড়ার দীপিকা দাসেরও। তিনি বলছেন, “উনি যে রূপান্তরকামী, তা পরে জানলাম। সরকার যে ওঁদের সমমর্যাদা দিতে বিচারকের দায়িত্ব দিয়েছে, এটা সত্যিই ভাল উদ্যোগ।”

Advertisement

যাঁর সম্পর্কে এত কথা, তিনি অরুণাভ নাথ। অ-ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তির জন্য রবিবার বহরমপুরে জেলা জজ আদালত চত্বরে ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির অফিসে লোক আদালত বসেছিল। সেখানে ১ নম্বর বেঞ্চে সিভিল জজ সিনিয়র ডিভিশন সেকেন্ড কোর্টের বিচারক তনুশ্রী দত্ত এবং আইনজীবী সুমনা সিংহের সঙ্গে তিনি ছিলেন আমন্ত্রিত বিচারক হিসেবে।

তিরিশ পেরনো অরুণাভ শরীরে পুরুষ, মনে নারী। পুরোপুরি নারীতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। ছোট থেকেই পাড়ায়, স্কুল-কলেজে কটূক্তি শুনেছেন অবিরত। তা সহ্য করেই কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হয়েছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেছেন এমএ।

কিন্তু নিজেকে লুকিয়ে রাখা ক্রমশ অসাধ্য হয়ে উঠছিল। শেষে ২০০৬ সালে কিছু সতীর্থের পরামর্শে রূপান্তরকামী হিসেবে প্রকাশ্যে আসেন। জেলার রূপান্তরকামীদের নিয়ে তৈরি করেন ‘মধ্য বাংলার সংগ্রাম’ নামে একটি সংস্থা। তার মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও রূপান্তরকামীদের সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য শুরু হয় তাঁর কাজ।

ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির অফিস মাস্টার অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সব ধরনের মানুষকে মূলস্রোতে যুক্ত করতে চাই। তাই ওঁকে বিচারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।”

সাধারণত লঘু অপরাধ বা জেলার বিভিন্ন আদালতে ঝুলে থাকা মামলার নিষ্পত্তি হয় লোক আদালতে। যেমন বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মামলা বা ব্যাঙ্কের ঋণ সংক্রান্ত মামলা, মোবাইল বা বিমা সংস্থার পরিষেবা নিয়ে মামলা। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ তথা রূপান্তরকামীদের কাজ ও সামাজিক মর্যাদার অধিকারের স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে এঁদের লোক আদালতে শামিল করা হচ্ছে। রূপান্তরকামীদের উন্নয়নের জন্য রাজ্যে ‘ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড’ও গড়া হয়েছে।

দেশে প্রথম রুপান্তরকামী অধ্যক্ষ, কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি খুবই আনন্দিত। তবে একটাই কথা— প্রত্যেক রূপান্তরকামীকে একলব্যের মতো নিজের যোগ্যতা দিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনতে হবে। রূপান্তরকামী বলে তাঁরা যেন কোনও বাড়তি সুবিধা না পান।’’

আর অরুণাভ বলছেন, “আমায় এই দায়িত্ব দেওয়া হবে, ভাবতে পারিনি। খুব ভাল লাগছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement