প্রতীকী ছবি।
রাজা নেই, সেই রাজপাটও নেই। কিন্তু কালীপুজোর দিন একরাতের রাজা হয়ে উঠেন এলাকার বাসিন্দারা। সকাল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত লাগামহীন আনন্দে মেতে উঠে নবাবি জেলার খড়গ্রাম ব্লকের রাজার গ্রাম এড়োয়ালী। এড়োয়ালী গ্রামের শারদ উৎসব বলতে ওই কালীপুজোকেই বলা হয়। কিন্তু এ বার কোভিড বিধি মেনে শুধু মাত্র নিয়মরক্ষার পুজো হবে। ঝলমলে আলো, গ্রাম জুড়ে মেলার আয়োজন, রকমারি বাজনা এবার সব কিছুই প্রায় বন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ওই গ্রামের রাজা ছিলেন রাম জীবন রায়। তিনিই ওই গ্রামে প্রথম কালীপুজোর সূচনা করে ছিলেন। তখন আড়ম্বরের সঙ্গে পুজো হলেও এ বার কোভিড-কালে পুজ আলোকিত হয়ে উঠবে শুধু অনেক প্রদীপের আলোয়।
পুজোর জন্ম লগ্ন থেকেই ওই পরিবারে এক রাতে চারটি কালীদেবী পুজো হয়। আজও সেই নিয়মের পরিবর্তন ঘটেনি। পারিবারিক সূত্রে দাবি রাজা রামজীবন রায়ের বংশধর বলতে তিন ছেলে। দেবদত্ত রায়, শ্যামসুন্দর রায় ও ইন্দ্রমুনি রায়। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার এড়োয়ালীর ওই রাজ পরিবারকে চৌধুরী উপাধি দেয়। তারপর থেকেই ওই পরিবারকে রায় চৌধুরী পরিবার বলেই পরিচিত। কথিত আছে, রাজা রামজীবনের ছেলে ইন্দ্রমুনিj খুব অল্প বয়সেই মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় অপর দু’ভাই দেবদত্ত ও শ্যামসুন্দর রাজপাট ভাগ করতে বসেন। সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুজোপাটেরও ভাগ হয়ে যায়। বড় পাঁচ আনা, ছোট পাঁচ আনা ও ছয় আনা পরিবারের পুজো বলেই পরিচিত আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে।
কালীমূর্তির নামকরণও আছে। যেমন বড় পাঁচ আনা পরিবারের বেলবুড়ি, টুঙ্গিবুড়ি, কুলবুড়ি ও শ্যামবুড়ির পুজো করে। ছোট পাঁচ আনা পরিবার আমরাবুড়ি ও মৌলবুড়ির পুজো করে। আর ওই দু’ভায়ের গোমস্তাদের জন্য পৃথক পুজোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল একটি ধর্মবুড়ি ও অপরটি ষষ্ঠীবুড়ি। তার মধ্যে ছোটপাঁচ আনা ও বড় পাঁচ আনা পরিবারের মধ্যে গোমস্তাদের পুজো গুলি ভাগাভাগি করেই পরিচালনা করেন বর্তমান সদস্যরা। তবে ছয় আনা পরিবারের চারটি কালীপুজো হয়। বড়কালী, মঠকালী, নিমবুড়ি ও চাতরবুড়ি। এদের মধ্যে গোমস্তাদের পুজো হচ্ছে চাতরবুড়ি। ওই সমস্ত কালীপুজো এলাকার কোন না কোন গাছের নীচে হতো। তাই যে গাছের নীচে পুজো হতো সেই গাছের নামে ওই কালীর নাম দেওয়া হয়েছিল।