মতুয়াদের নিয়ে সভা তৃণমূলের। — নিজস্ব চিত্র।
রাজনৈতিক সভা করা নিয়ে কার্যত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। এক দল কোনও জায়গায় সভা করার পরেই অন্য দল সেই জায়গাকে সভা করার জন্য বেছে নিচ্ছে। আসলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেউ কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এ বার তাই মতুয়াদের নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সভার পাল্টা হিসেবে ধানতলায় মতুয়াদের নিয়ে সভা করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী ১২ জানুয়ারি ওই সভা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কোন নেতা সেখানে প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
গত বছর ১৭ ডিসেম্বর রানাঘাটে সভা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পাল্টা হিসেবে ২৩ ডিসেম্বর রানাঘাটেই সভা হয় বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর। ২৬ ডিসেম্বর সেখানে শুভেন্দুর পাল্টা সভায় আসেন তৃণমূলের কুণাল ঘোষ, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত বছরের একেবারে শেষ দিনে ধানতলায় মতুয়া মহা সম্মেলনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন(সিএএ)ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) দ্রুত কার্যকর করার কথা জানিয়ে গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ বার ধানতলাতেই মতুয়াদের নিয়ে শুভেন্দুর পাল্টা সভা করার ডাক দিয়েছে তৃণমূল। কারণ, নদিয়ায় বরাবর ভোটের ফল নির্ধারণে মতুয়ারা বড় ভূমিকা নিয়ে থাকেন। ফলে তাঁদের নিজেদের দিকে টানার কোনও সুযোগ যুযুধান দুই পক্ষের কেউই ছাড়তে চাইছে না।
রানাঘাট উত্তর-পূর্বের প্রাক্তন বিধায়ক তৃণমূল নেতা সমীরকুমার পোদ্দার বলেন, ‘‘১২ জানুয়ারি ধানতলায় মতুয়াদের নিয়ে আমরা সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ নদিয়া দক্ষিণ সংগঠনের জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সিএএ নিয়ে নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বিজেপি। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়েছে, রাষ্ট্রব্যবস্থা চলছে। তার পরেও কেন নাগরিকত্ব? বিজেপির সিএএ 'গিমিক' ছাড়া কিছুই নয়।’’
রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন, জেলার দক্ষিণে মতুয়া ও উদ্বাস্তু ভোটব্যাঙ্ক শাসক ও বিরোধী দুই দলের কাছেই এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত লোকসভা নির্বাচন ও বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের ভোট জেলার ফলাফলে অন্যতম নির্ধারক হয়ে উঠেছিল। ওই দুই ভোটেই ভাল ফল করে বিজেপি। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মতুয়া ও উদ্বাস্তু ভোট ব্যাঙ্ককে সমান গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের দখলের রাখতে চাইছে বিজেপি ও তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, মতুয়া মহাসম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, ‘‘আর একটিও লোকসভা নির্বাচন পার হবে না। তার আগেই রাজ্যে সিএএ কার্যকর হবে।’’ কেন সিএএ তারও ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছিলেন। পাল্টা সভা থেকে সিএএ বিরোধিতা ও রাজ্যে কেন তা অপ্রাসঙ্গিক, সেই বিষয়কে প্রাধান্য দিতে চলেছে তৃণমূল।