ইউসুফ পাঠান। —ফাইল চিত্র।
বহরমপুর কেন্দ্রে জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে তৃণমূল প্রার্থী করার পরে তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ করেছিল বিরোধী দলগুলি। ইউসুফ পাঠান সাংসদ হলে এলাকার লোকজন তাঁকে কাছে পাবেন তো, এ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে ভোটে জেতার পরে বহরমপুরে আসেননি তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ। এ নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুললেন তাঁর দলেরই এক বিধায়ক। রবিবার সকালে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এ নিয়ে দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
এ দিন সকালে রেজিনগরের ফরিদপুরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মীর মদনের মৃত্যুদিবসের অনুষ্ঠানে এসে হুমায়ুন বহরমপুরে ইউসুফ পাঠানের অনুপস্থিতির প্রসঙ্গ তোলেন। বিধায়ক এবং সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের প্রসঙ্গে হুমায়ুন বলেন, ‘‘নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে ৫ তারিখ আমাদের সাংসদ (ইউসুফ পাঠান) গুজরাটে গিয়েছেন। তাঁকে এলাকার মানুষ ভোট দিলেন, কিন্তু তিনি ৫ তারিখের পরে আর (বহরমপুরে) এলেন না।’’ হুমায়ুনের দাবি, ‘‘ভোট করে তাঁকে আমরা তো জিতিয়েছি। এ বার তো তাঁর নিজের এলাকায় এসে ঘোরা দরকার। মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তাঁর কথা বলা দরকার। কিন্তু তিনি এখনও এলেন না। তাঁর আশপাশে ‘গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়লেরা’ ভিড়ে গিয়েছেন। তাঁকে তাঁরা ‘মিসগাইড’ করতে শুরু করেছেন। সাংসদ হিসেবে তাঁর এলাকায় দ্রুত আসা উচিত। তাঁর এখানে না আসার জবাবদিহি ভোটারদের কেন আমাদের দিতে হবে।’’ হুমায়ুন এ দিন আক্ষেপের সুরে আরও বলেন, ‘‘আমি একা কার সঙ্গে লড়ব? লড়তে গিয়ে কারও সঙ্গ পাই না। এমন একটা জেলায় বাস করি যে ন্যায্য কথা বলার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের পাশে কেউ থাকেন না। তাঁরা যত পারেন পিছন থেকে ছুরি মারেন, দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।’’
এ দিনের ওই অনুষ্ঠানে দলের সাংসদের পাশাপাশি স্থানীয় বিধায়ককেও বিঁধতে ছাড়েননি হুমায়ুন। ফরিদপুরে মীর মদনের সমাধিস্থল-সহ পুরো এলাকা উন্নয়নের দাবি তুলে হুমায়ুন বলেন, ‘‘এর আগে প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসান এখানে এলে তাঁর কাছে আমরা এই জায়গার উন্নয়নে একাধিক দাবি জানিয়েছিলাম। পরবর্তী কালে আরেক রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও এখানে এসেছিলেন। কিন্তু এখানকার কোনও উন্নয়ন হয়নি। আমি অন্য এলাকার বিধায়ক। ফলে আমার এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা এখানে খরচ করতে পারব না। আর এখানকার বিধায়ককে (রেজিনগরে তৃণমূল নেতা রবিউল আলম চৌধুরী বিধায়ক) তো এ সব কাজে পাওয়া যায় না। সকলে মিলে জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি তুলে ধরতে পারলে কাজ হতে পারে।’’
হুমায়ুনের অভিযোগ নিয়ে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রবিউলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শপথগ্রহণ শেষে লোকসভার অধিবেশন শুরু হবে। লোকসভার অধিবেশন ৩ জুলাই শেষ হবে। তার পরে সাংসদ এলাকায় আসবেন। আর আমাকে এলাকার মানুষ সব সময়েই কাছে পান। ফরিদপুরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’’
সাংসদ থাকাকালীন এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা প্রশাসনের অসহযোগিতায় খরচ করতে পারছেন না হলে একাধিক বার অভিযোগ করেছিলেন বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। এ দিন তাঁর সেই দাবিকে কার্যত মান্যতা দিয়ে হুমায়ুন বলেন, ‘‘অধীর চৌধুরী তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিলের সাড়ে ১২ কোটি টাকা খরচ করতে পারেননি। তাঁর যেমন গাফিলতি আছে, তেমনই আমাদের প্রশাসনের অসহযোগিতাও ছিল।’’ যদিও প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, নিয়ম মেনেই সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচ করা হয়েছে। প্রশাসনের অসহযোগিতা ছিল না।
তবে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্য নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ইউসুফ পাঠানের অনুপস্থিতি নিয়ে হুমায়ুন কবীর ঠিক কথাই বলেছেন।সাধারণ মানুষের মনে আগেই এই প্রশ্ন ছিল। এখন সাংসদের দলে সেই প্রশ্ন উঠছে।’’ তহবিলের টাকা খরচ মন্তব্য নিয়ে তাঁর পর্রতিক্রিয়া, ‘‘হুমায়ুন অর্ধসত্য বলেছেন। প্রশাসনের সম্পূর্ণ অসহযোগিতায় অধীর চৌধুরী তাঁর সাংসদ তহবিলের সম্পূর্ণ টাকা খরচ করতে পারেননি।’’