সিবিআইয়ের তল্লাশি (উপরে) বাড়ির সামনে তৃণমূল নেতারা । ছবি: গৌতম প্রামাণিক
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার আন্দির বাড়িতে তল্লাশি অব্যাহত। গত শুক্রবার দুপুর বারোটার সময় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল সিবিআই বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশি করছে। টানা তিন দিন ধরে তল্লাশি জারি রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দলীয় বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই হানা দেওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন দলের ব্লক ও জেলা নেতৃত্ব। শনিবার বড়ঞা ব্লকের শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে হাজার দু’য়েক কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হলেও ওই অনুষ্ঠানে বেশি লোক হয়নি।
দলীয় কর্মীদের বিধায়কের বাড়ির তল্লাশি অভিযান থেকে মোড় ঘোরাতে ইফতারে মজেছে শাসক দল তৃণমূল। যদিও বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সচেয়ারম্যান আবু তাহের খান বলেন, “ইদের সামনে ইফতারের অনুষ্ঠান নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর নিয়ম করে ওই অনুষ্ঠান হয়। ওই ঘটনায় আমাদের দলের কর্মীদের মন ভেঙে যাবে না।”
ইদ সামনেই। ইদের শেষের দিকে মূলত বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে সিবিআই তল্লাশিতে আসার পরে পরেই ইফতারের বহর বেড়েছে। কিন্তু শনিবার বড়ঞা ব্লকের ইফতারের লোক বেশি না হওয়ায় ভুরু কুঁচকেছে তৃণমূল নেতাদের।
একই সঙ্গে রবিবারও জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ইফতারের আয়োজন করেছে। সেখানেও একই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জীবনকৃষ্ণ সাহা ২০২১ সালে প্রথম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছে।
জীবনকৃষ্ণ বিধায়ক হওয়ার পরে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। বিধায়ক হওয়ার আগে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। বিধায়ক হওয়ার পরে সিবিআই তল্লাশি করছে। এতে দলের নাম জড়িয়ে গেল। সাধারণ কর্মীদের দাবি এমনিতেই পঞ্চায়েতের আগে আবাস যোজনার দুর্নীতির ঘা এখনও শুকোয়নি। এরই মধ্যে দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার হিড়িক দিন দিন বাড়ছে। এবার দলের বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে জেলায়। সমস্তটাই শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এতে পঞ্চায়েত ভোটে কোনও ক্ষতি হবে না, সেটা দলে নেতৃত্ব জোর করে বললেই ভোটে একটা প্রভাব পড়বেই।
একের পর নেতা তিন দিন জীবনকৃষ্ণের বাড়ির সামনে এসে জমা হওয়ার ঘটনা ঘটছে। তার মধ্যে অনেকে আবার বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই আসার ঘটনার ঘায়ে মলম দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে আখেরে কোন কাজ হচ্ছে না, সেটা নিয়েও দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, জীবনকৃষ্ণ কেন দু’টি মোবাইল ফোন পুকুরের জলে ফেলতে গেলেন! সেই বিষয়েও আলোচনা চলছে। জীবনকৃষ্ণ নিজেই প্রমাণ করলেন তিনি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলেও মনে করছেন দলের জেলা নেতৃত্বের একটি অংশ। ভরতপুরের বিধায়ক বলেন, “জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে সিবিআই এসেছে সেটা সম্পূর্ণ আইনি বিষয়। এর সঙ্গে দলীয় কর্মসূচির কোন বিষয় নেই। আমার বিধানসভা কেন্দ্রের মালিহাটি ও ভরতপুররে ইফতার হচ্ছে।”
সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, “তদন্তের নামে বিজেপি সম্পূর্ণ নোংরামি করছে। আইন আইনের পথে চলবে। কেউ অপরাধী প্রমাণিত হলে সাজা হবে।”