বাহন-বদল: ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
ছিল কালো স্করপিয়ো, হয়ে গেল সাইকেল!
ম্যাজিক নাকি?
ধুলোমাখা স্মৃতি নিয়ে ডোমকলের অনেকেই বলছেন, ‘‘ও সব ম্যাজিক-ট্যাজিক কিস্যু না। এর নাম ঠেলা! সেই কালো গাড়ির কনভয়ই কাল হয়েছে মান্নান সাহেবের ছেলের। নতুন পুরপ্রধান সেটা বুঝেই এখন এ ভাবেই জনসংযোগ করছেন।’’
কথাটা নেহাত কথার কথা নয়। শনিবার কাউন্সিলরের স্বামী-সহ জনা পনেরো কাউন্সিলর ডোমকলে সাইকেলে ঘুরেই ‘দিদিকে বলো’-র প্রচার সারলেন। ডোমকলের নতুন পুরপ্রধান তৃণমূলের জাফিকুল ইসলাম কোনও রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘আমাদের প্রাক্তন পুরপ্রধান ডোমকল এলাকায় কালো গাড়ির কনভয়ে ধুলো উড়িয়েছেন। সেই ধুলো এত দিন গায়ে মেখেছেন জনতা। আমরা ঠিক তার উল্টো পথই বেছে নিয়েছি। এখন জনতার ওড়ানো ধুলো গায়ে মাখতেই গাড়ি ছেড়ে বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছি সাইকেলকেই।’’
প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমিক হোসেনের কালো স্করপিয়োর কনভয়ের কথা আজও স্পষ্ট মনে আছে ডোমকলের। ধুলো উড়িয়ে সাঁ সাঁ করে ছুটছে আট-ন’টি স্করপিও। সব গাড়ির রং কালো। চকিতে দেখলে মনে হত, ঠিক যেন দক্ষিণের কোনও সিনেমা। কোনও সভা হোক বা দলের কাজ— সৌমিককে আগে রেখে পিছু পিছু ছুটত সেই কনভয়। লোকজনও টিপ্পনি কাটতেন, ‘‘শুধু একসঙ্গে গাড়ির দরজাগুলো খুলে পা দিয়ে বন্ধ করতে পারে না, এই যা!’’
মাস কয়েক আগে পর্যন্ত ডোমকল এমন দৃশ্য দেখতেই অভ্যস্ত ছিল। ডোমকল পুরসভার তৎকালীন পুরপ্রধান তৃণমূলের সৌমিক হোসেন ও তাঁর সঙ্গী একাধিক কাউন্সিলরের এমন ফিল্মি-চালচলন দেখে অনেকেই বলতেন, ‘‘এই ঔদ্ধত্যই এক দিন সৌমিকের কাল হবে।’’
হয়েছেও তাই। প্রথমে দলীয় কাউন্সিলরদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। এখন তিনি প্রাক্তন। নতুন পুরপ্রধান হওয়ার পরে সেই কালো গাড়ির কালি মুছতে মরিয়া ডোমকল পুরসভার নতুন পুরপ্রধান জাফিকুল। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের প্রাক্তন পুরপ্রধানের নানা আচরণে ডোমকল ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত। আমরা সেটা আর হতে দেব না। মানুষের পাশে থেকেই তাঁদের জন্য কাজ করব। এবং সেটাই শুরু করেছি।’’
একটা সময় ডোমকলে এই কালো গাড়ি নিয়ে চর্চাও হয়েছে ঢের। সাইকেল থেকে রাতারাতি স্করপিও গাড়ির মালিক হয়ে গিয়েছিলেন কেউ কেউ। বিরোধীদের দাবি, এক দিকে সাধারণ মানুষকে ভোট না দিতে দেওয়া, অন্য দিকে উন্নয়নের নামে লুট। এই দু’টি বিষয়ই মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি। তার পরে কাউন্সিলরদের কালো গাড়ির দৌরাত্ম্যে হাঁফিয়ে উঠেছিল ডোমকল।
জাফিকুলও সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন। ফলে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তাঁর এই অভিনব কৌশল। জাফিকুল বলছেন, ‘‘এতে যেমন জনসংযোগ বাড়ছে, তেমনি পুরএলাকার রাস্তা-ঘাট, নিকাশি খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ মিলছে। মানুষও আমাদের কাছে পেয়ে নিজেদের কথা বলছেন। হুস করে গাড়িতে চলে গেলে কি আর এ সব হত?’’
ডোমকলের এক তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘কালো গাড়ি-সহ বেশ কিছু বিষয়ে ডোমকলের কাউন্সিলরদের নামে দিদির কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ডোমকলের মানুষ। আর তার পরেই ঠেলায় পড়ে এসি গাড়ি ছেড়ে সাইকেলে ঘুরছেন কাউন্সিলরেরা।’’
ডোমকলের সিপিএমের এরিয়া কমিটি সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘‘দেখুন, তৃণমূল নেতাদের আরও কত কী করতে হবে। এর পরে হয়তো ‘হাতে ধরো, পায়ে ধরো’ কর্মসূচিও নিতে হতে পারে। মানুষ সব মনে রেখেছে। সময় মতো ঠিক জবাব দেবে।’’ আর সৌমিক হোসেন বলছেন, ‘‘পুরপ্রধান আমারই দলের লোক। তাঁর বিরুদ্ধে আমি কোনও কথা বলব না। আর তিনি আমার বিরুদ্ধে যা বলছেন তার জবাব মানুষই দেবে।’’