দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে মুর্শিদাবাদে এসেই শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করে গিয়েছিলেন, কবে কোন পুরসভার দখল নেবেন তাঁরা।
কংগ্রেসের দখলে থাকা জেলা পরিষদও কবে ছিনিয়ে নেবেন তাঁরা, আগাম জানিয়ে দিয়েছিলেন তা-ও।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে একে একে সে হিসেবই মেলাচ্ছেন তিনি। পঞ্চায়েত, পুরসভার পরে এ বার বাস্তবিকই মুর্শিদাবাদ পুরসবাও দখল নিতে চলল তৃণমূল।
শুক্রবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে শুভেন্দুর হাত ধরেই কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের দশ সদস্য দলবদল করায় সংখ্যার বিচারে মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদ সরকারি ভাবে হাতবদল শেষতক হয়েই গেল।
তবে প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে। জেলা পরিষদের স্থায়ী কমিটিতে এখনও বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা যে রয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। জেলা কংগ্রেসের নেতারা সেই পরিসংখ্যানই এখন খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে রয়েছেন।
জেলা পরিষদ দখলের ম্যাজিক ফিগার ছিল ৩৫, তৃণমূলের দাবি তাদের দখলে এখনই রয়েছে অন্তত ৩৯টি আসন। শুভেন্দু বলেন, ‘‘মঙ্গলবার ইদ। তার পরেই মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতিকে অপসারণের জন্য নোটিস জারি করা হবে।’’ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁদের পরের লক্ষ্যও— বহরমপুর। শুভেন্দুর হুমকি— ‘‘১৮ সেপ্টেম্বর বহরমপুরে আমার সভা আছে। সেখানে বহরমপুর পুরসভার কাউন্সলিদের অনেকেই হয়তো থাকবেন।’’
বাম আমলে এই জেলায় একক ভাবেই জেলা পরিষদই নয় কংগ্রহেস তাদের গড় ধরে রেখেছিল। আর তার ইউএসপি যে হালের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, তা নিয়ে রাখঢাক রাখছেন না তৃণমূল নেতারাও।
এখন প্রশ্ন, তাহলে কি অধীর তাঁর খাসতালুকেই জমি হারাচ্ছেন হু হু করে। জেলা কংগ্রেসের এক অধীর-ঘনিষ্ঠ নেতা বলছেন, ‘‘জমি যে কিঞ্চিৎ সরে গিয়েছে তা আর অশ্বীকার করি কী করে!’’
২০০৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে জিতে প্রথম জেলাপরিষদ দখল করেছিল কংগ্রেস। তবে, ২০০৮ সালে মাত্র একটি আসনে পিছিয়ে থাকায় হাতছাড়া হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। তৃণমূলের ভরা জোয়ারে, ২০১৩ সালে তা ফের দখল নেয় কংগ্রেস। ৭০ আসনের জেলাপরিষদে কংগ্রেস জেতে ৪২টিতে। বামফ্রন্টের দখলে যায় ২৭টি আসন। তৃণমূল জেতে মাত্র একটি আসন। দলবদলের ফলে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন পুরসভা ও জেলাপরিষদ তৃণমূল দখল করলেও অধীরের বজ্র আটুনিতে কংগ্রসের দখলে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ অটুটই ছিল। কিন্তু তৃণমূলের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হতেই তা ফস্কা গেরো হয়ে পড়েছে। কেন?
কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘ব্যাখ্যাটা জলের মতো সহজ। হালের নেতা-কর্মীরা আর আদর্শ নয় রাজনীতিটা করেন পেশার তাগিদে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে সেই রোজগার কোথায়, তাই দলবদলের হিড়িক পড়ে গিয়েছে।’’ অধীর অবশ্য এ দিনও বলেন, ‘‘অনাস্থা প্রস্তাব পাস না হওয়া পর্যন্ত জেলাপরিষদ কংগ্রেসের হাতেই রয়েছে, এটা মনে রাখবেন।’’সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন, ‘‘শুভেন্দু তো অপহরণ মন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার থেকে সরকারি আমলারাও।’’
অধীরের অভিযোগ, কোথাও মোটা টাকা না হয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আবার কোথাও অপহরণ এমনকী মাদক পাচারের অভিযোগে জড়িয়ে দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে কংগ্রেস কর্মীদের। শুভেন্দু কিন্তু বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও ভুল ভেঙেছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে সামিল হতে এঁরা সিপিএম-কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।’’