মতুয়াদের নিয়ে চাপে তৃণমূল। — ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোট সামনেই। তার আগে মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে টানতে চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপি দুই তরফই। কারণ, নদিয়ায় বরাবরই ভোটের ফলে অন্যতম নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেন মতুয়ারা। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক মহলের মতে জেলায় মতুয়াদের মধ্যে প্রচারে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। যে কোনও ভাবে এ ব্যাপারে তাদের টেক্কা দিতে তাই তৃণমূল এখন মরিয়া।
কিছু দিন আগেই ধানতলা এলাকায় মতুয়াদের একটি কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী-সহ একাধিক বিজেপি নেতা। মতুয়া সংগঠনের তরফেও বেশ কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল যেখানেও বিজেপি নেতৃত্ব হাজির ছিলেন। আবার গত শনিবার ভালুকাতে আয়োজন করা হয়েছিল মতুয়া সনাতনী মহাজাগরণ মেলার। সেখানে শান্তনু ঠাকুর, শুভেন্দু অধিকারী, মুকুটমনি অধিকারী হাজির ছিলেন। এই ধরনের একাধিক কর্মসূচিতে হাজির হয়ে মতুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। মঞ্চ থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ তুলছেন। নাগরিকত্ব আইন যে মতুয়াদের স্বার্থে এবং তৃণমূল তাতে বাধা দিচ্ছে সেই প্রচার চালানোর চেষ্টা করছেন।
অর্থাৎ, সামগ্রিক ভাবে সবাইকে নিয়ে জনসভা করার পাশাপাশি বিজেপি এখানে বিশেষ ভাবে মতুয়া জনগণকে লক্ষ্য করে তাঁদের নিয়ে তাঁদের এলাকায় সভা করার পন্থা নিয়েছে। সেখানে দলের বিশিষ্ট নেতারা উপস্থিত থাকছেন। তাঁরা যে মতুয়াদের ও মতুয়া দাবিদাওয়াকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটাও এই ভাবে বোঝানো হচ্ছে।
মতুয়াদের বিজেপিপন্থী সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বিজেপি বিধায়ক মুকুটমনি অধিকারী বলেন, ‘‘শরণার্থী উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াই অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। উদ্বাস্তু শরণার্থীরা যদি নাগরিকই হবেন তা হলে এখন বিভিন্ন সরকারি কাজে তাঁদের থেকে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে কেন? মুখ্যমন্ত্রী নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুন।’’
এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র মতুয়াদের কেন্দ্র করে প্রচারের নতুন রূপরেখা তৈরিতে মন দিতে হয়েছে তৃণমূলকেও। জেলায় মতুয়াদের নিয়ে বিভিন্ন সম্মেলনের ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে তারা। এই সম্মেলনগুলি থেকে নিজেদের বার্তা মতুয়াদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়, মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ, তেহট্টে গুরুচাঁদ স্টেডিয়াম, হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে রাজ্য সরকারের ছুটি ঘোষণার মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।
তৃণমূলপন্থী মতুয়া সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসু বলেন, ‘‘নাগরিকত্বের নামে বিজেপি মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। মতুয়ারা তো আগে থেকেই নাগরিক। নতুন করে কী প্রমাণ করতে হবে? মতুয়ারা তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা তৃণমূলের পাশে আছেন। তারা দেখছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের জন্য কী কী কাজ করছেন।’’