হাজারদুয়ারি দেখতে গেলেন পিএসি সদস্যরা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) বৈঠক এড়িয়ে গেলেন জেলার তৃণমূলের বিধায়ক ও সাংসদেরা। গরহাজির ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতিও। জুট কর্পোরেশনের কমিশনার সহ সর্বোচ্চ আধিকারিকরা উপস্থিত থাকলেও আসেননি কর্পোরেশনের নয়া চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। এই বৈঠকে কংগ্রেসের ন’জন ও বামেদের দুই বিধায়ক আনিসুর রহমান ও মহসীন আলি উপস্থিত ছিলেন। শাসক দলের বিধায়কদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে অধীর বলেন, “সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন, কেন আসেননি।” তবে এত দিন শাসক দলের কোনও অনুষ্ঠানে ডাক পেতেন না বিরোধী কংগ্রেসের কেউ। সেই প্রসঙ্গ তুলে অধীর বলেন, “কেউ অধম হলে আমি উত্তম হব না কেন? তাই আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।”
তবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রকের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সহ জেলা প্রশাসনের কৃষি আধিকারিকরা। তবে লক্ষ্য ঠিক রেখে সাফল্যের সঙ্গে উতরে গেল পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) প্রথম দিনের বৈঠক।
মুর্শিদাবাদ জেলায় ভাল পাট উৎপাদন হয়। কিন্তু চাষি পাট বেচে দাম পায় না। এই অভিযোগ অহরহ শুনতে হয় রাজনীতির কারবারিদের। অথচ পরিবেশ রক্ষায় প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বাড়ছে প্রতি নিয়ত। ফলে উৎপাদিত পাটের পাশাপাশি জেলায় যদি পাটজাত দ্রব্য তৈরির জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে জেলার পাট চাষীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন অধীর। আর সেই কারণেই দেশের মেট্রো শহর বাদ দিয়ে মফস্সল বহরমপুরে পিএসির বৈঠক বসেছে বলে জানান পিএসির চেয়ারপার্সন অধীর চৌধুরী। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জেলার পাট চাষিদের পাশাপাশি পাটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ওই বৈঠকে পাট চাষী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে সরাসরি মত বিনিময় করেন কমিটির সদস্যরা। পাট চাষিরাও তাঁদের চাষের সুবিধা অসুবিধার কথা অকপটে বলেন। আলোচনা হয় পাটজাত দ্রব্যের বিপণন নিয়েও। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক রাজ্যের সাংসদ, প্রাক্তন মন্ত্রীরা তথা কমিটির সদস্যরা এদিন পাট চাষিদের হয়ে সওয়ালও করেন।
রানিনগরের বিধায়ক ফিরোজা বেগম বলেন, “পাট ছাড়ানোর মেশিন দিয়ে কাঁচা পাট ছাড়িয়ে নিলে ছোট জলের ট্যাঙ্কেই পাট পচানো যায়। ওই মেশিন এবং ট্রেনিং যদি সরকারি ভাবে চাষিদের দেওয়া হয়, তা হলে চাষিরা উপকৃত হবেন।” বৈঠক থেকে বেরিয়ে ফিরোজা বলেন, “সদস্যরা আমাদের কথা শুনেছেন এবং আশ্বাস ও দিয়েছেন।” পাটচাষি আজগর শেখ বলেন, “পাটের বীজ কিংবা পাট পচানোর জন্য বিশেষ ওষুধের কথা বলেছেন সেগুলি সস্তায় পেলে ভাল হয়।” নওদা ব্লকের পাটচাষি সুজয় মণ্ডল বলেন, “পাট চাষ করতে গেলে পাটের সহায়ক মূল্য বাড়াতে হবে বলে আমরা সদস্যদের কাছে দাবি জানিয়েছি।” বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য সাংসদ সত্য পাল সিংহ বলেন, “কৃষকদের কী কী সমস্যা আছে, কেন্দ্রের স্কিমগুলি রাজ্যে ঠিক মত চলছে কি না, কোথাও কোনও অসুবিধা বা সমস্যা হচ্ছে কি না, সে সবই আলোচনা করতে পিএসির বৈঠক বসেছে। আমরা পাট চাষিদের কথাও শুনেছি বৈঠকে।” সোমবার বিকেলে হাজারদুয়ারি ঘুরতে গিয়েছিলেন কমিটির সদস্যরা। তাঁর আগে ক্যাগ রিপোর্ট নিয়ে ওই কমিটির সদস্যরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।