ফাইল চিত্র।
মাস কয়েক আগে লোকসভা ভোটে এগিয়ে থাকায় বিজেপির মনোবল এখন তুঙ্গে। রাজনীতির কারবারিদের মতে, পুরভোটের আগে তাই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি তৃণমূল। এই নির্বাচন তাদের কাছে কঠিন পরীক্ষাই হতে চলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শহরের পুরভোট কোনও দিনই বামেদের পক্ষে যায়নি। বরাবরই এই শহর ডানপন্থীদের সঙ্গে থেকেছে। বিশেষ করে কংগ্রেসের সঙ্গে। কিন্তু ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের অনেকেই ভিতরে ভিতরে তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতে থাকেন। ২০১৩ সালে শেষবার পুরভোটের আগে পুরপ্রধান অসীম সাহা-সহ কংগ্রেস কাউন্সিলররা তৃণমূলে যোগ দিলে এই শহর পুরোপুরি শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। যদিও তার আগেই ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট প্রার্থী তাপস পালকে ব্যাপক ভোটে এগিয়ে দেয় এই শহর। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এই শহর থেকে প্রায় ২৮ হাজার ভোটে জয়ী হন জোট প্রার্থী অবনীমোহন জোয়ারদার। ২০১৩ সালের পুরসভা ভোটে ২২টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। জেতার পর গণনা কেন্দ্রেই তৃণমূলে যোগ দেন দুই নির্দল কাউন্সিলর।
কিন্তু তারপর থেকেই শাসকদলের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন কৃষ্ণনাগরিকরা। ২০১৪ সালে আবার কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হন তাপস। সেবার ১৮ হাজার ভোটে এই শহরে পিছিয়ে থাকেন তিনি। কেবল মাত্র ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫১০ ভোটে এগিয়ে থাকে তৃণমূল। আবার ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কিছুটা টেনে তোলা গেলেও মাত্র ১৭২ ভোটে এগিয়ে থাকেন তৃণমূল প্রার্থী অবনীমোহন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কেবল মাত্র সংখ্যালঘুপ্রধান ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১১৪৯ ভোটে এগিয়ে থাকে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র। বাকি ২৩টি ওয়ার্ডে তাঁর ভরাডুবি হয়। এই ভোটে কৃষ্ণনগর পুরসভা এলাকা থেকে প্রায় ২৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকে তৃণমূল অর্থাৎ ২০১৩ সালের পুরভোটের পর থেকে বিজেপির উত্থান হতে শুরু করেছে একদা কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত কৃষ্ণনগর শহরে।
এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সেই ধারা কি এবারও অব্যাহত থাকবে? না কি প্রতি বার যেমন শহরের মানুষ তাঁদের চেনা কাউন্সিলরদের পাশে থেকে এসেছেন এবারও তেমনটাই থাকবেন? তৃণমূল নেতারা অবশ্য দাবি করছেন যে অন্য ভোটে যাই হোক না কেন, এবারও পুরসভোটে তাদেরই পাশে থাকবে তৃণমূল।
এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘এটা তো স্থানীয় ভোট। পাঁচ বছর যে মুখগুলো মানুষের পাশে থাকে, তারাই ভোট পায়।’’ ওই নেতাদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটে এই শহর বিজেপিকে ভোট দিয়েছে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে। ধর্মের মেরুকরণে। কিন্তু পুরভোট তার উপর ভিত্তি করে হবে না।
এক নেতা বলেন, ‘‘পুরভোট হয় স্থানীয় সুযোগসুবিধার উপর ভিত্তি করে। কোনও দিনই পুরসভা ভোটে বিজেপি এখানে কল্কে পায়নি। শেষবার ২০১৩ সালের ভোটে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ ভোট।’’ তৃণমূল নেতা কর্মীদের আশা এবারও সেই একই অবস্থান নেবেন শহরের মানুষ। কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “অন্য ভোটের সঙ্গে পুরভোটকে কোনও দিনই গুলিয়ে ফেলেন না এই শহরের মানুষ। তাঁরা বরাবরই পুরসভার কাজ দেখে ভোট দেন। এবারও তাই দেবেন। আর আমরাই জিতব।”
কিন্তু বিজেপির দাবি, বিকল্প না থাকায় এত দিন তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে মানুষ। দলের নেতাদের দাবি, ২৭ হাজার ভোট কোনও ভাবেই তৃণমূল নিজেদের দিকে টানতে পারবে না। তার উপরে এই শহরে সংখ্যালঘু ভোট ১০ শতাংশেরও কম। হিন্দু প্রধান কৃষ্ণনগরে নাগরিকত্ব আইন তাদের পক্ষেই যাবে। বিজেপি নেতা আশুতোষ পাল বলেন, “পুরসভার লাগাম ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ এবার ভোট দেবেন। সেই সঙ্গে আছে নাগরিকত্ব আইন। জয় আমাদের নিশ্চিত।’’ যদিও এই দাবিকে অলীক স্বপ্ন বলেই উড়িয়ে দিচ্ছে তৃণমূল।