বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সামনে ভেঙে পড়েছেন নিহত কিশোরীর মা। বুধবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
নাবালিকার গণধর্ষণ ও খুনের বর্ষপূর্তিতে যে ‘স্মৃতিফলক’ বসাল, তাতে পকসো আইনের তোয়াক্কা না করে মৃতার নাম লেখা হল। শুধু তাই নয়, সভামঞ্চ থেকে একাধিক বিজেপি নেতা কিশোরীর নাম-পরিচয় উল্লেখ করে বক্তৃতা করলেন।
এই নিয়ে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূলও সরব হয়েছে। তৃণমূলের নদিয়া জেলা মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, “কতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন হলে নির্যাতিতার নাম এভাবে সামনে আনা হয়। আইনত এটা করা যায় না।”
বুধবার সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না কিশোরীর পরিবারের লোকজন। তাঁদের বক্তব্য, এই মৃত্যু নিয়ে কোনও রাজনীতি হোক, তাঁরা সেটা চাইছেন না। যদিও এই মঞ্চ থেকে অনেককেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাতেও দেখা যায়। পরে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্ব বিজেপি নেতাকর্মীরা মৌনী মিছিল করে মৃতার বাড়িতে যান। নির্যাতিতার পরিবারকে নতুন ঘর করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শুভেন্দু।
গত বছর ৪ এপ্রিল স্থানীয় তৃণমূল নেতা সমরেন্দু গয়ালির বাড়িতে তাঁর ছেলে সোহেল ওরফে ব্রজ গয়ালির ‘জন্মদিনের পার্টি’তে বছর চোদ্দোর কিশোরীকে মদ খাইয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। রক্তক্ষরণের জেরে পরের দিন ভোরে তার মৃত্যু হয়। সকালে কোনও ডাক্তারের দেওয়া শংসাপত্র ছাড়াই গ্রামের অননুমোদিত শ্মশানে কিশোরীর দেহ দাহ করা হয়। বিষয়টি জানজানি হওযর পর চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে ৯ এপ্রিল মৃতার মা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তৃণমূল নেতা ও তার লোকজনের হুমকির কথাও তিনি লিখেছিলেন। পুলিশ প্রথমেই সমরেন্দু ও ব্রজকে গ্রেফতার করে। দু’দিন পরে হাই কোর্টের নির্দেশ সিবিআই তদন্তভার নেয়। এখনও পর্যন্ত ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রানাঘাট আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলছে।
এ দিন মৌনী মিছিল করে শুভেন্দু মৃতার বাড়িতে গেলে তাঁকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতিতার মা। শুভেন্দু আশ্বাস দেন, রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদের থেকে দু’হাজার টাকা করে চাঁদা তুলে এই পরিবারের ঘর করার জন্য দেবেন।
এ দিন তৃণমূলের কেউ গিয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেনি। তবে তারা সামনে আনছে বিজেপির সভায় আইন লঙ্ঘন করে মৃতার পরিচয় সামনে আনার বিষয়টি। বাণীকুমারের কটাক্ষ, “আসলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে মৃত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি করতে গিয়েই বিজেপি কাণ্ডজ্ঞান হারিয়েছে। মানুষ এই ধরণের রাজনীতিকে প্রশ্ন দেবে না।” বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, “মেয়েটি ধর্ষিত হলেও মারা গিয়েছে। আর মারা যাওয়ায় তার পরিচয় সামনে আনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই বলেই আমি জানি।”