ফাইল চিত্র।
নদিয়া জেলায় দীর্ঘদিন তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা নেতাদের সম্পর্কে বক্রোক্তি করে অনেককেই অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র।
বুধবার হরিণঘাটা শহর আইএনটিটিইউসি-র উদ্যোগে এক রক্তদান শিবিরে এসে মদন দাবি করেন, “নদিয়া জেলায় যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা কার কী করেছেন আমি জানি না। তাঁরা নিজদের পকেটটা বড্ড ভারী করে ফেলেছেন।”
মদন অবশ্য কারও নাম করেননি। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, পোড় খাওয়া তৃণমূল নেতার এই মন্তব্যে দলের একাংশের দুর্নীতিই ফের সামনে চলে এসেছে। বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি তথা রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের মতে, “উনি সত্যি কথাই বলেছেন। বাস্তবটা উনি জানেন তো। আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তিনি এ-ও জানেন যে কাটমানির পয়সা কোথায় কোথায় গিয়েছে, কে কত খেয়েছে।” তবে এই বিষয়ে আদৌ কথা বাড়াতে চাননি তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী রত্না ঘোষ। মদনের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি শুধু বলেন, “উনি ওঁর কথা বলেছেন। এ নিয়ে আমি কী বলব!”
মদন অবশ্য শুধু ওতেই ক্ষান্ত হননি। কারও নাম না-করেও তাঁর কটাক্ষ, “সিংহ গ্রামে থাকলেই সিংহ হওয়া যায় না। কর্মীদের হতে দিন। কৃষকের ঘরে ভোটটা থাকে, টেন্ডারের কাগজের মধ্যে ভোট থাকে না।” কাকে নিশানা করে কেন এই মন্তব্য, সেই ব্যাখ্যায় যাননি মদন। তবে দলের নিচুতলার কর্মীরা নিজেদের মতো অর্থ করে নিয়ে জল্পনা করছেন। সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অলকেশ দাসের মতে, “তৃণমূল যে সর্বব্যপ্ত একটা দুর্নীতিগ্রস্ত দলে পরিণত হয়েছে তা মদন মিত্রের কথাতেই পরিষ্কার।” জেলা তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা শংকর সিংহ এই প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি। মন্তব্য করতে চাননি শংকর-পুত্র তথা রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শুভঙ্কর সিংহও।
গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূলের বিপুল জয় সত্ত্বেও দক্ষিণ নদিয়ার আটটি আসনই পেয়েছিল বিজেপি। সেই প্রসঙ্গ টেনে মদন বলেন, “নদিয়ায় হারিয়ে যাওয়া আমাদের যে আটটা আসন, তার জন্য আমরা অত্যন্ত অনুশোচনায় ভুগছি। পঞ্চায়েতে এই আসন আমাদের ফেরত দিন। তৃণমূলের উপর রাগ করে, স্থানীয় কারও উপর ব্যক্তিগত রাগ করে তৃণমূলকে দূরে ঠেলে দেবেন না।”
কারা সেই সব স্থানীয় নেতা যাঁদের উপরে ভোটারদের রাগ থাকতে পারে? সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে তৃণমূলের হরিণঘাটা ব্লক সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ দাবি করেন, “দলের দুর্দিনেও ছিলাম, সুদিনেও আছি, আগামী দিনে যদি ফের দুর্দিন আসে তো দলের সঙ্গেই থাকব।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।