প্রতীকী ছবি
ঘূর্ণিঝড় আমপানের পর ঘরহারাদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে স্রোতের মতো। তা নিয়ে লিখিত নালিশ থেকে শুরু করে বিক্ষোভ, অবরোধ —কিছুই বাকি থাকছে না। জেলা ও ব্লক প্রশাসনের একাধিক কর্তা জানাচ্ছেন, সরেজমিনে যাচাই না-করে আবেদনকারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়ে হয়েছে। ফলে যাঁদের ঘর আদৌ ঝড়ে ভাঙেনি তাঁরা টাকা পেয়ে গিয়েছেন।
জেলার একাধিক ব্লকের বিডিও-রা জানাচ্ছেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য যে নিয়ম রয়েছে তা জেলায় মানা হয়নি অনেক জায়গায়। ক্ষতিপূরণের টাকা কারা পাবেন তা যাচাই করার জন্য পঞ্চায়েত স্তরে চার সদস্যের একটি কমিটি তৈরি হওয়ার কথা। ওই কমিটিতে পঞ্চায়েত সদস্য, বিডিও-র প্রতিনিধি, পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধি, বিরোধী দলনেতার থাকার কথা। আবেদনকারী সত্যি ক্ষতিগ্রস্ত কিনা, কমিটি তা যাচাই করবে। তারপরে প্রধানের সুপারিশক্রমে সেই রিপোর্ট জমা হওয়ার কথা ব্লকে। ব্লকই নিজের আধিকারিকদের মাধ্যমে আবেদনপত্র যাচাই করে তৈরি করবেন ক্ষতিপূরণ প্রাপকের চূড়ান্ত তালিকা।
আধিকারিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, আমপানের ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া মানা হয়নি। বেশিরভাগ জায়গায় পঞ্চায়েত কিছু বিচার না করে ব্লক অফিসে আবেদনপত্র পাঠিয়ে দিয়েছে। আর ব্লকও পঞ্চায়েতের পাঠানো তালিকাকে মান্যতা দিয়ে উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। এই গাফিলতির জন্যই বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চায়েত কর্তাদের ঘনিষ্ঠ লোকজন নিয়ম ভেঙে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন।
কল্যাণী ব্লকের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘আসলে টাকা ব্লকে আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আমরা তা উপভোক্তাদের দিতে শুরু করছিলাম। এর ফলে তাঁরা সত্যি ক্ষতিগ্রস্ত কিনা তা যাচাই করা হয়নি। তার ফলে ভুগতে হয়েছে।’’ মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাজদিয়া সংসদ এলাকায় যেমন এমন বহু লোক টাকা পেয়েছেন যাঁরা দোতলা বা এক তলা বড় পাকা বাড়িতে থাকেন। তার পরেই কল্যাণী ব্লকের বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায় আবেদনপত্র খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। তত ক্ষণে বহু অযোগ্য লোক টাকা পেয়ে গিয়েছেন।
কল্যাণী পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তপন মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের ব্লক এলাকার দুর্নীতির অভিযোগ হওয়ার মূল কারণ, আবেদনপত্র খতিয়ে না-দেখা। জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য নিয়ে বিডিও যাচাই করার কথা বলেননি। প্রথমের দিকে নিজেও যাচাই করেননি। তাই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’’
বিরোধীদের দাবি, গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় বিরোধীদের ভোটে কার্যত লড়তে দেওয়া হয়নি। ফলে, পঞ্চায়েতগুলিতে বিরোধী দলনেতা বলে কিছুই নেই। শাসকদল নিজেদের মতো করে দুর্নীতি করেছে। বেশির ভাগ লোক প্রথমে আবেদনপত্র জমা করেছিলেন পঞ্চায়েত অফিসে। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য মানবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘যে কোনও দুর্যোগকেই সুযোগ বলে মনে করে তৃণমূল। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মদনপুর-২ পঞ্চায়েতে যে ভাবে তৃণমূল জনগনের টাকা আত্মসাৎ করল তা তো ভাবাই যায় না।’’ এর পাল্টা তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহের উক্তি, ‘‘ অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন আবার আবেদনপত্র খতিয়ে দেখছে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে দলের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। সে প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে।’’