বহুদিন আগেই মহকুমা শহরের মর্যাদা পেয়েছে জঙ্গিপুর। অথচ দমকল কেন্দ্র নেই সেখানে। বার বার পুরভোটের আগে দমকল কেন্দ্র তৈরির আশ্বাস পেলে সব রাজনৈতিক পক্ষের তরফে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবায়িত হয় না। এ বারের ভোটের মুখে আর সেই দমকল ইস্যু বড় দেখা গিয়েছে জঙ্গিপুরে। বিরোধীদের অভিযোগ, বাম পরিচালিত পুরবোর্ডের গাফিলতিতেই তৈরি হয় না দমকলকেন্দ্র।
গত কয়েক বছরে জঙ্গিপুর পুর এলাকার একাধিকবার ভয়াবহ আগুন লেগেছে। বছর খানেক আগে বাস দুর্ঘটনার জেরে মা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষিপ্ত লোকজন আগুন ধরায় বাসে। আগুন নেভাতে ধুলিয়ান থেকে যখন দমকলের গাড়ি দুর্ঘটনাস্থল ফুলতলায় পৌঁছয় ততক্ষণে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। উমরপুরে গ্যাসের গোডাউন থেকে আগুন ধরে বেশ কিছুদিন আগে। পুড়ে যায় বেশ কিছু দোকান। সেই আগুন নেভাতে যেতে দেরি হওয়ায় হেনস্থার শিকার হন দমকলকর্মীরা। শহর লাগোয়া শ্রীকান্তবাটি হাইস্কুলের এক ছাত্র বাস চাপা পড়ে মারা যায়। সেই ঘটনায় উন্মত্ত লোকজন বাসে আগুন লাগায়। সে আগুন নেভাতে ধুলিয়ান থেকে যায় দমকলের গাড়ি। কিন্তু তার আগেও বাসটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। একইভাবে জঙ্গিপুরের ভাগীরথী সেতুর নীচে গজিয়ে ওঠা বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন লাগে। সেখানে দমকলের গাড়ি যেতে পারেনি। ফলে সেতুর তিনটি স্তম্ভ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলার দমকলের এক কর্তা বলেন, ‘‘বহরমপুরের পরেই আয়তনের নিরিখে সবচেয়ে বড় মহকুমা জঙ্গিপুর। কিন্তু সেখানেই দমকলকেন্দ্র নেই। এমনিতেই জেলায় দমকলের সংখ্যা কম। ফলে জঙ্গিপুরে আগুন লাগলে আমাদের কালঘাম ছুটে যায়।”
মোটামুটি এক একর জমিতেই গড়া যায় দমকলকেন্দ্র। সেই জমিই জোগাড় করতেই ব্যর্থ পুরসভা। ফলে মুর্শিদাবাদ জেলায় ৪টি দমকলকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও সে তালিকায় নাম নেই জঙ্গিপুরের। শহরের এক বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “পুরসভা শুধু প্রতিশ্রুতিই গিয়ে গেল। দমকলকেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে কোনও সদর্থক পরিকল্পনা নিতে পারল না। আবার ভোটের মুখে দমকল ইস্যু মাথা চাড়া দিয়েছে। ভোট ফুরোলে আবার ঠান্ডা ঘরে চলে যাবে দমকল গড়ার বিষয়টি।”
নাগরিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিও শহরে দমকলকেন্দ্র গড়ে না ওঠার জন্য বিঁধছে বাম পরিচালিত পুরবোডর্কে। শহর তৃণমূলের সভাপতি ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী গৌতম রুদ্র বলেন, ‘‘রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন পুর-শহর জঙ্গিপুর। তিন দশক ধরে রাজ্যে এবং পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। অথচ জঙ্গিপুরে দমকল কেন্দ্র গড়ার জন্য কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের মুখে দমকল নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি মানুষকে বোকা বানিয়েছে তারা। বলা হচ্ছে, জমির অভাবে দমকল কেন্দ্র গড়া যাচ্ছে না। অথচ, পুরসভা আবর্জনা ফেলার জন্য দুটি জমি কিনেছে। কিন্তু সেখানে আবর্জনাও ফেলাও হচ্ছে না। পুরসভার সদিচ্ছা থাকলে সেই পতিত জমিতে দমকল কেন্দ্র গড়া যায়। আমরা ক্ষমতায় এলে দ্রুত গড়ব দমকলকেন্দ্র।’’ বিজেপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সম্রাট ঘোষ বলেন, ‘‘নিরাপত্তার স্বার্থেই দমকল জরুরি। নির্বাচন এলেই বাম নেতারা দাবি করেন, দমকল কেন্দ্র গড়তে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভোট মিটলে সে প্রস্তাব নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য করেন না পুর কর্তৃপক্ষ। যেভাবে জঙ্গিপুরে মাতৃসদনের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে বাম জমানায়, সেভাবেই ধাপ্পা দেওয়া হয়েছে দমকল নিয়েও।’’
জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম সমস্যার কথা মেনে বলছেন, ‘‘প্রাচীন মহকুমা শহরে দমকল না থাকাটা দুর্ভাগ্যের। পুরসভা দমকল কেন্দ্র গড়তে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট। জমি জোগাড় করাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাছাড়া ঘন জনবসতির মধ্যে দমকল কেন্দ্র গড়াটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শহরের বাইরের দিকে কোথাও দমকলকেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি।” মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলা শাসক ( ভূমি) অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, ‘‘জঙ্গিপুর শহরের মধ্যে বা আশপাশে দমকলকেন্দ্র গড়ার মত সরকারি জমি রয়েছে। কিন্তু আইন মেনে তা হস্তান্তর করাটা জটিল ব্যাপার। বেশিরভাগ জমিই কেন্দ্র সরকারের। তাই জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে সেভাবে তত্পর হতে পারছে না।”