Coronavirus

নিভৃতবাসে বাড়ির খাবার নিয়ে ত্রস্ত গ্রাম

অভিযোগ উঠেছে, বাড়ি থেকে পরিবারের যে সদস্যেরা খাবার নিয়ে আসছেন তাঁদের কাছে সুরক্ষাসামগ্রী বলতে থাকছে শুধু একটি সার্জিক্যাল মাস্ক।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০২:৩১
Share:

কোয়রান্টিন কেন্দ্রে খাবার নিয়ে মহিলা। নবদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

এলাকার নিভৃতবাস কেন্দ্রগুলিতে আবাসিকদের বাড়ি থেকে খাবার দেওয়ার কথা বলেছে প্রশাসন। কিন্তু সেই খাবার যাঁরা নিয়ে আসছেন তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা কী থাকছে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের একেবারেই নজর নেই এবং তাতে এলাকায় সংক্রমণের আশঙ্কা থাকছে বলে অনেকে অভিযোগ তুলছেন। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভও।

Advertisement

অভিযোগ উঠেছে, বাড়ি থেকে পরিবারের যে সদস্যেরা খাবার নিয়ে আসছেন তাঁদের কাছে সুরক্ষাসামগ্রী বলতে থাকছে শুধু একটি সার্জিক্যাল মাস্ক। খালি পা, খালি হাতে খাবার নিয়ে তাঁরা নিভৃতবাস কেন্দ্রে ঢুকে যাচ্ছেন বেশিরভাগ জায়গায়। কারণ, অধিকাংশ জায়গায় কোনও নিরাপত্তা কর্মী বা প্রহরী নেই। কতদূর অবধি ভিতরে ঢোকা যাবে, টিফিন কৌটো বা বাটি কোথায় রাখা যাবে তা দেখিয়ে দেওয়ার বালাই নেই। অনেকেই ভিতরে ঢুকে দিব্যি পরিজনের হাতে খাবার ধরিয়ে দিচ্ছেন। তার পর এঁরাই আবার ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। তাতে গ্রামে প্রবল আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।

অতি সম্প্রতি নবদ্বীপ ব্লকের স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের ভাগীরথী বিদ্যাপীঠের কোয়রান্টিন কেন্দ্রের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, তিন বেলা সেখানে খাবার দিতে আসতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকের পরিজনদের। বেশির ভাগই মুখে রুমাল, কাপড় বা সস্তার মাস্ক পরে যাচ্ছেন। আর কোনও রক্ষাকবচ নেই। এতে তাঁদের নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার যেমন আশঙ্কা থাকছে তেমনই, এলাকার করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, ভাগীরথী বিদ্যাপীঠের দরজা দিয়ে একে একে বেরিয়ে আসছে কয়েকটি সাইকেল। অধিকাংশের মুখে বাঁধা রুমাল। সাইকেলের হ্যান্ডেল থেকে ঝুলছে খাবারের থলে। গেটের সামনে রঙিন ফ্রক পড়ে দাঁড়িয়ে এক বালিকা। ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন তার মা। মাজদিয়া স্কুল পাড়ার বাসিন্দা চম্পা দেবনাথ। চার দিন ধরে তাঁর স্বামী এখানে আছেন। বললেন, ‘‘ভিতরে একটা টেবিল আছে, সেখানে বাড়ির বাসন থেকে আলগা করে ঢেলে দিই ওনার বাসনে।” তাঁর একটু পরেই বেরিয়ে এলেন রেনুবালা সাহা। তাঁরও পরিবারের দু’জন আছেন ওই কেন্দ্রে। বললেন, ‘‘ ওদের কাছে যে বাসন আছে তাঁর মধ্যে ঢেলে দিই। বাড়ি গিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিই।” অর্থাৎ, কেন্দ্রের একেবারে ভিতরে ঢোকেন তাঁরা এবং আবাসিকদের মুখোমুখিও হন।

ওই এলাকার বাসিন্দা তথা নদিয়ার প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের মেঘলাল শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কোয়রান্টিন সেন্টার বিষয়ে যা বলা হচ্ছে আর চোখের সামনে যা দেখছি তা তে অনেক ফারাক। ন্যূনতম নিরাপত্তার শর্ত মানা হচ্ছে না।” যদিও নবদ্বীপে বিডিও বরুনাশিস সরকারের কথায়, “প্রতিটি কোয়রান্টিন সেন্টারে একটা নির্দিষ্ট জায়গা রাখা আছে। বাড়ির লোকেরা সেই জায়গায় গিয়ে খাবার দিয়ে আসবেন। এটাই নিয়ম। সব জায়গায় আমাদের লোকেরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।” নদিয়ার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) অসিত দেওয়ান বলেন, “বিষয়টি আমি খোঁজ নিচ্ছি। তবে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট টেবিলে খাবার দিয়ে আসবেন পরিবারের লোকেরা, এমনটাই বিধি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement