Fishing Cat

অজানা প্রাণী বাঘরোলই, মত বনকর্তার

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মেছো বিড়াল ভাল সাঁতার কাটতে পারে। জলাজমিই তাঁদের স্বাভাবিক বাসস্থান। এদের প্রধান খাদ্য মাছ।

Advertisement

সম্রাট চন্দ 

 শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৪২
Share:

প্রাথমিক ভাবে পায়ের ছাপ যা দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে এটা বাঘরোল বা মেছো বিড়াল। স্থানীয়দের কাছে আমাদের আবেদন এই প্রাণীটিকে দেখলে তাঁরা যেন তাকে আঘাত না করেন। শুভাশিস ঘোষ, নদিয়া-মুর্শিদাবাদের সহকারী বনাধিকারিক

বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েত এলাকায় ‘রহস্যজনক’ প্রাণীটি রাজ্যপ্রাণী বাঘরোল বা মেছোবিড়াল বলেই ধারণা বন দফতরের আধিকারিকদের। মঙ্গলবার বন দফতরের আধিকারিকেরা গিয়ে এলাকা ঘুরে দেখেন। বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন। গ্রামবাসীদের অযথা আতঙ্কিত হতে বারণ করেন তাঁরা। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের সহকারী বনাধিকারিক শুভাশিস ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে পায়ের ছাপ যা দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে এটা বাঘরোল বা মেছো বিড়াল। স্থানীয়দের কাছে আমাদের আবেদন এই প্রাণীটিকে দেখলে তাঁরা যেন তাকে আঘাত না করেন।”

Advertisement

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের ফুলিয়াপাড়ায় যান বন দফতরের আধিকারিকেরা। ছিলেন নদিয়া মুর্শিদাবাদের দু’জন বিভাগীয় সহকারী বনাধিকারিক পার্থ মুখোপাধ্যায় এবং শুভাশিস ঘোষ, কৃষ্ণনগরের রেঞ্জার বিকাশ বিশ্বাস-সহ অন্য আধিকারিকেরা। সোমবার ফুলিয়াপাড়ার বাসিন্দা রতন বসাক নামে এক ব্যক্তির বাড়ির উঠোনে কিছু নখের আঁচড়ের দাগ মিলেছিল। এ দিন সেই দাগও দেখেন তাঁরা। বিড়াল জাতীয় প্রাণীর একাধিক ছবি দেখান বাসিন্দাদের। তাঁদের সম্বন্ধেও জানান। সেখানে জনবসতির প্রান্তে একটি গর্তের কথা তাঁদের জানান গ্রামবাসীরা। সেটিও দেখেন বনকর্তারা। তার পাশেই একটি মাঠ এবং চাষের জমি আছে। পাশে একটি জলাশয় রয়েছে। সেই জলাশয়েও পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা। জলাশয়ের ধারের নরম মাটিতে তাঁরা বন্যপ্রাণীর পায়ের ছাপ দেখতে পান। সেটি আকারে ছোট। পরে তাঁরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে এ দিনও আশপাশের এলাকা ঘুরে প্রাণীটির কোনও হদিস মেলেনি। বন দফতরের কর্তারা জানান, পায়ের ছাপ দেখে তাঁদের মনে হচ্ছে এটা বাঘরোল বা মেছো বিড়াল। যা রাজ্যপ্রাণী।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মেছো বিড়াল ভাল সাঁতার কাটতে পারে। জলাজমিই তাঁদের স্বাভাবিক বাসস্থান। এদের প্রধান খাদ্য মাছ। সে কারণে জলাশয়ের আশপাশেই এদের বিচরণভূমি। এক সময়ে এই প্রাণী রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে দেখা গেলেও বর্তমানে জলাভূমি কমে যাওয়ায় তা অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। রাজ্য প্রাণী হলেও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে পড়ে এই মেছো বিড়াল বা বাঘরোল। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের সর্বোচ্চ তালিকায় স্থান রয়েছে এই বাঘরোল। এই প্রাণীকে আঘাত করলেও তাই সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। উচ্চতায় এরা খুব বেশি হয় না। ফুট দুয়েকের মতো উচ্চতা এবং দৈর্ঘ্য হয় আড়াই থেকে তিন ফুটের মতো। আকারে খুব একটা বড়সড় না হওয়ায় বড় শিকার ধরে খাওয়া এদের পক্ষে সম্ভব হয় না। মাছের অভাবে কোনও কোনও সময়ে ইঁদুর, কাকড়া, ব্যাঙ, শামুক বা অন্য প্রাণী ধরেও এরা খেতে পারে। তবে এরা হাঁস, মুরগি খেয়েছে এমনটা দেখা যায়নি বলে জানান জেলার বনকর্তারা।

Advertisement

বন দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এদের গায়ে লেপার্ডের মতো ছাপ থাকে বলে অনেকেই বাচ্চা লেপার্ড ভেবেও ভুল করেন। এরা নিশাচর প্রাণী। রাত্রিবেলায় বার হয়ে শিকার ধরে আবার নিজের আস্তানায় ফিরে যায়। কাজেই মানুষের সঙ্গে সে ভাবে এদের সামনাসামনি হওয়ার ঘটনা খুব একটা ঘটে না। মানুষকেও এরা যে আক্রমণ করেছে এমনটাও দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছে বন দফতরের এক আধিকারিক। জেলার এক বনকর্তা বলেন, শীতকালের এই সময়টা তাঁদের মিলনের সময়। এই সময়ে তাই মিলনের আহ্বান জানিয়েও তাঁরা ডাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement