বিদ্যুতের তারের উপর ভেঙে পড়েছে গাছ। —নিজস্ব চিত্র
ঝড়ে নিভেছে বাতি। শহর-গ্রাম সব আঁধারে একাকার। মধ্যরাতের আমপান জেলার বিভিন্ন জায়গায় উপড়ে ফেলেছে বিদ্যুতের খুঁটি, ছিঁড়েছে তার। ফলে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পার হতে চললেও অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ আসেনি। বহু এলাকায় বড় গাছ ভেঙে তারের উপর পরে বিদ্যুৎ সংযোগ চলে গিয়েছে।
সাধারণ বাড়ি থেকে একাধিক কোয়রান্টিন সেন্টার, বুধবার রাত থেকে সব এলাকায় দফায়-দফায় বা টানা বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দু-তিন দিন লাগবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্তারা।
দুরবস্থায় পড়তে হয়েছে বেশ কিছু কোয়রান্টিন সেন্টারের আবাসিকদের। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কৃষ্ণগঞ্জ, চাপড়া, রানাঘাট-১ ব্লকের পাশাপাশি ফুলিয়ার দু’টি কোয়রান্টিন সেন্টারে বুধবার রাত থেকে বিদ্যুৎ- সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। চলেনি জেনারটর। অন্ধকারে, গরমে, মশার কামড় খেয়ে থাকতে হচ্ছে আবাসিকদের। চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ঝড় শুরু হওয়ার সময় থেকেই লোডশেডিং হয়ে যায়। একটানা চলার পর বৃহস্পতিবার বিকল হয়ে যায় জেনারেটর। পরে তা সারানো হয় এবং বেলা দশটা থেকে আবার জেনারেটর চলে। মাঝের সময়ে ইনভার্টার দিয়ে শুধু প্রসূতি বিভাগে কাজ কোনওরকমে চালানো হয়।
সংস্থার রিজিওন্যাল ম্যানেজার রমেশ চন্দ্র মাধু বলেন, “আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি হাসপাতালের সংযোগ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে।” এর জন্য শুধু কৃষ্ণনগর ডিভিশনেই ৫৫টির মতো টিম গাড়ি ও সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করে চলেছে। কাজ চলছে অন্যত্রও। তবে এরই মধ্যে শান্তিপুর শ্মশানের ইলেকট্রিক চুল্লি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে কাঠে দাহ করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় চার্জের অভাবে প্রায় সর্বত্র মোবাইল বা ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে হ্যারিকেন, মোমবাতির চাহিদা বেড়েছে। করিমপুরের এক গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর স্মরজিৎ রায় জানান, নেট খারাপ থাকায় গ্যাস অফিসে আসা গ্রাহকদের কোনওরকম পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ব্যাঙ্কে লিঙ্ক না থাকায় টাকা জমা দেওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রের খবর, শুধু কৃষ্ণনগর ডিভিশনেই ১২টির মতো ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েছে। তিনশোর বেশি বিদ্যুৎ- খুঁটি উপড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তা ঠিক করতে অন্তত দু’দিন লাগবে।
জেলার বহু জায়গায় তারের উপরে বড় গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় কোনও ভাবেই বৃহস্পতিবার বিকেলের আগে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা যায়নি। কৃষ্ণনগরের শক্তিনগরের একটা অংশ, অঞ্জনাপাড়া, জলকলের মতো অনেক এলাকায় এ দিন গভীর রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা যায়নি। বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারের অসম্ভব ক্ষতি হয়েছে কৃষ্ণগঞ্জ, হাঁসখালি, কৃষ্ণনগর-১ ব্লকের পাশাপাশি আরও অনেক এলাকায়। জল না থাকায় পাণীয় জলের সরবরাহ বহু জায়গায় ব্যহত হয়েছে। বাড়িতে পাম্প চালিয়ে জলও তোলা যায়নি।