—প্রতীকী চিত্র।
গ্রামের মানুষের দুর্দশা ঘোচাতে ভোটের ময়দানে প্রতিশ্রুতির অন্ত নেই। পঞ্চায়েতে জিতলে কারা কী করবে মঞ্চে সেই ফিরিস্তি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও রাজনৈতিক দলই পিছিয়ে নেই। অথচ যাঁদের কথা ভেবে নেতাদের ঘুম উবেছে, সেই গ্রামীণ জনগণের কৃষিনির্ভর অংশ এই মুহূর্তে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। অভিযোগ, প্রতিদিনের আনাজের বাজারের চড়া দরই তার জন্য দায়ী। যা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন উদাসীন।
৩০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে খোলা বাজারে বিকোচ্ছে আদা। ভাল আদা ৩৫০ টাকা। প্রায় মাসখানেক হতে চলল পাইকারি বাজারে আদার দর ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। ২৬০-২৮০ টাকা পর্যন্ত চড়েছে দাম। খুচরো বাজারে তার প্রভাব পড়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। এই দামে আদা বিক্রির কথা কল্পনাও করতে পারেননি খুচরো আনাজ বিক্রেতা বলাই ভৌমিক। তিনি বলেন, “৮০-১০০ টাকার আদা এই ভাবে দুর্মূল্য হয়ে উঠবে কোনও দিন ভাবিনি।” তিনি জানান, আদা বছরে এক বারই ফলন হয়। সারা বছরের আদার যোগানের জন্য ভিন্ রাজ্যের উপর নির্ভরশীল বাংলা। দক্ষিণ ভারত, অসম এবং মণিপুর থেকেই আদা আমদানি করা হয়। দক্ষিণ ভারতে গতবারের বন্যার জন্য আদার ফলন মার খেয়েছে। অশান্ত মণিপুর থেকেও আদা আসছে না। প্রশাসন ভোট নিয়ে ব্যস্ত। এই সুযোগে যাঁদের কাছে মজুত আছে, তাঁরা চুটিয়ে কালোবাজারি করছেন। তাতেই আদার এই অকল্পনীয় মূল্যবৃদ্ধি।
নিত্য প্রয়োজনীয় আনাজের দামও পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। বাজারে এই সময়ের আনাজ পটল, ঝিঙে, ঢেঁড়শ, লাউ, চালকুমড়ো, মিষ্টি কুমড়ো, উচ্ছে, বেগুন কিছুরই সে ভাবে দেখা মিলছে না। বাজারে আনাজের চেহারা দেখলে পছন্দ হয় না। দাম শুনে চমকে যেতে হয়। কিলোগ্রাম প্রতি ২৫-৩০ টাকার নীচে কোনও আনাজই প্রায় বিক্রি হচ্ছে না। উচ্ছে, ডাঁটা বা কাঁচালঙ্কার কিলোগ্রাম ১৫০ টাকা। বেগুন আর টোম্যাটো ৮০ টাকা কিলোগ্রাম। শসা ৭০ টাকা। আলু ২০ টাকা থেকে শুরু। মাছ মাংসের দর তথৈবচ। সেই দামে আনাজ কিনতে ভিড় নেই বাজারে। ফলে চরম লোকসানের মুখে পড়ছেন বিক্রেতারা। জেলার চাষি থেকে কৃষি বিশেষজ্ঞ এ জন্য প্রধানত দায়ী করছেন বৃষ্টিহীনতাকে।
সরকারি কৃষিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “এ বার বৈশাখ মাস থেকে কার্যত বৃষ্টিই হয়নি। তাই মাঠের সব সফলই শুকিয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই আনাজের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।”
চাষিদের একাংশ জানান, জেলার উত্তর থেকে দক্ষিণ মাঠের পর মাঠ রোদে ঝলসে গিয়েছে। মাঠের ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে। করিমপুরের প্রবীণ চাষি বিশ্বনাথ বিশ্বাস বলেন, “করিমপুরের অন্তত ১০০ বিঘা লঙ্কার জমি থেকে খুব বেশি হলে ৫ কিলোগ্রাম কাঁচালঙ্কা পাওয়া যাবে। সম পরিমাণ বেগুনের খেত থেকে ১০ কিলোগ্রাম বেগুন। তা হলে বাজার চড়া না হয়ে যাবে কোথায়?” কৃষক সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বনাথ বলেন, “নদীতে জল নেই তাই রিভার পাম্পেও জল নেই। গভীর নলকূপ অচল। ডিজেলের অস্বাভাবিক দাম ফলে সকলের পক্ষে স্যালো ব্যবহার করা সম্ভব নয়। অতএব চাষিরা এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাবেন। তবে সে সব নিয়ে কেউ একটা কথাও বলছেন না।” চাষিদের ক্ষোভ সব রাজনৈতিক দলের লোকেরাই ভোটের প্রচারে প্রতিশ্রুতির ঝুলি উপুড় করে বাজার মাত করছেন। তবে আসল সমস্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যদি ঠিক মতো বৃষ্টি হয় তা হলেও কমপক্ষে তিন সপ্তাহ লাগবে বাজারে আনাজের জোগান বাড়তে।