প্রতীকী ছবি
আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন খোদ পঞ্চায়েত প্রধান।
নবদ্বীপ ব্লকের একমাত্র সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত ফকিরডাঙা-ঘোলাপাড়ার প্রধান তয়েব আলি শেখের অভিযোগ, তৃণমূল-পরিচালিত পঞ্চায়েত হওয়ায় আমপানের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিতে তাঁকে অন্ধকারে রেখে শাসকদলের নেতারা নিজেদের পছন্দের লোকের নাম ক্ষতিপূরণ প্রাপকের তালিকায় তুলেছেন। তাঁর আরও দাবি, ক্ষতিপূরণ- প্রাপকদের তালিকায় শুধু শাসকদল- ঘনিষ্ঠদের নাম। কিন্তু এলাকায় যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ তাঁদের নাম নেই।
নবদ্বীপ ব্লকের প্রত্যন্ত প্রান্তের পঞ্চায়েত ফকিরডাঙ্গা-ঘোলাপাড়া। স্বরূপগঞ্জ বিডিও অফিস থেকে দূরত্ব কম-বেশি তেইশ কিলোমিটার। নদী দিয়ে ঘেরা গোটা পঞ্চায়েতে যাতায়াতও বেশ কষ্টসাধ্য। পঞ্চায়েতের আটটি আসনের মধ্যে পাঁচটি সিপিএমের দখলে। বাকি তিনটি তৃণমূলের। পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগ, “আমরা বিরোধী পঞ্চায়েত বলে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সরকারি ক্ষতিপূরণের তালিকায় কী ভাবে, কাদের নাম উঠল আমার জানা নেই। তবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম রাখা হয়নি। শাসকদল-ঘনিষ্ঠদের নাম আছে।”
ওই পঞ্চায়েতের ২৬৬ নম্বর বুথ থেকে নির্বাচিত নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মহসিন শেখের কথায় “আমাদের পঞ্চায়েতের ২৬৮ নম্বর বুথের বাহিরচড়া গ্রাম। সেখানকার তৃণমূল সদস্য লাটুফুল বিবি। তাঁর পরিবারের এমন কেউ নেই যাঁর নাম তালিকায় ওঠেনি। তালিকায় তাঁর শাশুড়ি আনোয়ারা বেওয়া, দুই জা মুর্শিদা বিবি এবং খায়রুন্নেসা বিবি, ননদ হাদিজা বিবি, পারিবারিক বন্ধু ধুলোআলি শেখ সবাই আছেন। মুর্শিদা বিবির স্বামী ওসমান শেখ আবার ফকিরডাঙা-ঘোলাপাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সভাপতি।”
ওই পঞ্চায়েতের ২৭১ নম্বর বুথের তাঁত শ্রমিক মুজাহিদ শেখের রোজগার চার মাস বন্ধ। খেতমজুর কালো শেখ, আজিমুদ্দিন শেখ—কারও নামই তালিকায় নেই। অথচ, তাঁরা হতদরিদ্র এবং ঝড়ে তাঁদের প্রত্যেকের বাড়িরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা ভাঙা ঘরে কোনওক্রমে সপরিবার দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। ২৭০ নম্বর বুথের খেতমজুর ছাবিয়া বিবি। ঝড়ে ঘর ভাঙলেও তাঁর সারানোর পয়সা নেই। বলেন, ‘‘আমাদের ধরাধরি করার লোক নেই তাই সরকারি সাহায্য পাইনি।” একই অভিযোগ খেতমজুর সুখবাহার মণ্ডল, ২৬৭ নম্বর বুথের আরশেদ মণ্ডলের।
২৬৬ নম্বর বুথে থাকেন তাঁতশ্রমিক হবিবুল শেখ। আমপানের রাতে গাছ ভেঙে পড়ে তাঁর চালাঘরের উপরে। তুবড়ে যায় ঘর। কিন্তু তাঁর নাম তালিকায় নেই। মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে চরম বিপদে সাজেমন বেওয়া। তাঁর গঙ্গার ধারের বাড়ি আমপানে চৌচির। তিনি বলেন, “ভাঙা ঘর কী করে সারাবো জানি না।”
যদিও অভিযোগ উড়িয়ে ফকিরডাঙা-ঘোলাপাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সভাপতি ওসমান মণ্ডল বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েতে যাঁদের নাম তালিকায় উঠেছে তাঁরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত। তালিকা তৈরির সময় সিপিএমের লোকেরাও ছিলেন। এখানে মোট একাশি জনের নাম উঠেছে।” তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম ক্ষতিপূরণ- তালিকায় থাকার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদেরই নাম উঠেছে। কেউ তদন্ত করলেই দেখতে পাবেন।”
ওই পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের গৌতম ঘোষের পাল্টা অভিযোগ, “প্রধানের নিজের ব্যর্থতায় আমাদের পঞ্চায়েতে ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকের নাম তালিকায় ওঠেনি। উনি নির্দিষ্ট সময়ে ব্লকে নাম জমা দিতে পারেননি। প্রধানের তালিকায় আমাদের পঞ্চায়েতের এক প্রাক্তন সিপিএম সদস্য কুতুবুদ্দিন মণ্ডলের নামও আছে। তাঁরও পাকা বাড়ি। শুনেছি প্রধানের ছেলের নামও আছে।” যদিও নিজের দলের সভাপতির পরিবারের সদস্যদের নাম তালিকায় ওঠার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন। বলেছেন, “এই বিষয়টি দল দেখছে। যে-ই অন্যায় করুক তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে দল।”