নবদ্বীপের এক কোয়রান্টিন কেন্দ্রে নবদ্বীপের পুরপ্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন বিমানকৃষ্ণ সাহা (চিহ্নিত)। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কার যাওয়া উচিৎ কোয়রান্টিনে! রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নাকি নবদ্বীপের পুরপ্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন বিমানকৃষ্ণ সাহা-র। তা নিয়ে মঙ্গলবার সারা দিন চাপানউতোড় তুঙ্গে।
হঠাৎ তাঁদের কোয়রান্টিনে যাওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন?
কারণ, দু’জনেই গত সোমবার নবদ্বীপ চরমাজদিয়ার চরব্রহ্মনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্গিল পাড়া বাঁধে, স্থানীয় ক্লাবে, স্কুলে কোয়রান্টিনে থাকা ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার খবর নেন।
এর পর কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতে রাত তিনটের সময় জগন্নাথ সরকারের বাড়ি গিয়ে তাঁকে ঘুম থেকে তুলে হাতে চিঠি দিয়ে কোয়রান্টিন সেন্টারে যাওয়ার নির্দেশ পাঠায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, তিনি কোয়রান্টিনে থাকা মানুষদের সংস্পর্শে এসেছেন। সেই চিঠি গ্রহণ করেননি রানাঘাটের সাংসদ। তিনি পাল্টা ঘোষণা করেছেন, ওই একই জায়গায় নবদ্বীপের পুরপ্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন বিমানকৃষ্ণ সাহা-ও গিয়েছেন। তাঁকেও যদি কোয়রান্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় একমাত্র তবেই তিনি সরকারি নির্দেশ মানবেন, নচেৎ নয়। এই নিয়ে আপাতত বিবাদ তুঙ্গে। দু’জনেই দাবি করেছেন যে, তাঁরা দূরত্ববিধি মেনে কোয়রান্টিনে থাকা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
জগন্নাথবাবুর দাবি, ‘‘কোয়রান্টিন কেন্দ্রে নিজেদের চরম দুর্দশার কথা ওখানে থাকা শ্রমিকেরা আমাকে জানিয়েছেন। আমি শাসক দলের ব্যর্থতা জেনে ফেলেছি, আমাকে তো এখন আটকাতেই হবে। তাই জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে দিয়ে এই চক্রান্ত করা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা-র বক্তব্য, ‘‘বিমানকৃষ্ণ নবদ্বীপেরই লোক। তাঁকে কেন কোয়রান্টিনে রাখা হবে? জগন্নাথবাবু বাইরে থেকে এখানে এসেছিলেন। তাই তাঁকে কোয়রান্টিনে থাকার কথা বলা হয়েছে।’’
এর জবাবে জগন্নাথবাবু বলেন, ‘‘আমার কোয়রান্টিনে থাকতে আপত্তি নেই, কিন্তু আমার সঙ্গে অনেক কর্মী গিয়েছিলেন। তাঁদেরও কোয়রান্টিনে নিতে হবে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমি ঘুরে আসার পরেই ওই সব কোয়রান্টিন সেন্টারে অনেক লোক জন নিয়ে গিয়েছিলেন নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা। তাঁকে নোটিস দেওয়া হয়নি কেন? তাঁকে কোয়রান্টিনে যাওয়ার নোটিস দেওয়া হলে আমিও কোয়রান্টিনে যাব।’’
এ ব্যাপারে বিমানকৃষ্ণ সাহা-র বক্তব্য, “আমাকে কেউ কোয়রান্টিনের যাওয়ার নির্দেশ দেননি। এমন কোনও নোটিস পাইনি। তা ছাড়া, আমি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সব জায়গায় গিয়েছি।” গোটা ঘটনায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ(২) অসিত দেওয়ান বলেন, “ বিষয়টি আমি জানি না। কিছু বলতে পারব না।”