দুয়ারে ইদ, আলমারিতে চলকে পড়েছে চোখ ধাঁধানো এলইডি-র ছটা

মলের সঙ্গে পাল্লা আটপৌরে বস্ত্রালয়ের

ঢাল-তরোয়াল ছাড়া কি আর যুদ্ধে জেতা যায়! আর এ সবই হল গিয়ে যুদ্ধের উপকরণ। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যে মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়া বহু ক্রেতাই ফিরতে শুরু করেছেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এখন আগে দর্শনধারী হতে হচ্ছে। না হলে সবই মলে যাবে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share:

বাছাই: এটাই পছন্দ। বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

মল্ল নয়, মল-যুদ্ধ!

Advertisement

শপিং মল বনাম আটপৌরে বস্ত্রালয়।

মল যদি আলেকজান্ডার হয়, পুরনো বস্ত্রালয়ও তবে পুরু। কোনও দয়া-টয়া নয়, একেবারে প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রতিষ্ঠানের আচরণ।

Advertisement

হাল না ছেড়ে গা ঝাড়া দিয়ে সাজছে গাঁ-গঞ্জের দোকান। ধুলোটুলো সব ধুয়ে মুছে সাফ। আলমারির নতুন কাচে চলকে পড়েছে চোখ ধাঁধানো এলইডি-র ছটা। বসেছে ম্যানিকুইন। কোনও কোনও দোকানে আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রও। বাচ্চা, মহিলা ও পুরুষদের আলাদা আলাদা বিভাগ। এমনকী ট্রায়াল রুমেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

ঢাল-তরোয়াল ছাড়া কি আর যুদ্ধে জেতা যায়! আর এ সবই হল গিয়ে যুদ্ধের উপকরণ। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যে মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়া বহু ক্রেতাই ফিরতে শুরু করেছেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এখন আগে দর্শনধারী হতে হচ্ছে। না হলে সবই মলে যাবে!

ইদ কিংবা পুজোর মরসুমে গাঁ-গঞ্জ-মফস্‌সলে কাপড়ের দোকানে উপচে পড়ত ভিড়। পুরু ধুলো জমে থাকা সাইনবোর্ড না দেখেই লোকজন ঢুকে পড়তেন চেনা দোকানে।

—‘আরে আসুন, আসুন, অনেক দিন পরে তো। বৌদিকে দেখছি না?’

—‘আপনার দোকান ছাড়া আর কবেই বা কোন দোকানে গেলাম! নাহ্, গিন্নির শরীরটা ভাল নয়। গোটা পাঁচেক শাড়ি নিয়ে যাব। পছন্দ করে একটা নেবে। বাকিগুলো আবার ফেরত দেব।’

—‘নিশ্চয়। আপনি কি আর আমাদের আজকের কাস্টমার!’ ঢিমেতালে ঘুরতে থাকা পাখার নীচে বসে এ ভাবেই চলত বিকিকিন। দু’একজন ভাগ্যবান জায়গা পেতেন সবেধন নীলমনি একটামাত্র বেঞ্চ কিংবা চেয়ারে। বাকিরা চাক বেঁধে মাটিতেই বসে থাকতেন। দোকানের আলমারিতে লাল কালিতে লেখা থাকত ‘ধার চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’। কিন্তু সে তো লেখার লেখা!

—‘চাচা, আরও ৩৫০ টাকা লাগবে তো?’

—‘তা বাপ, খাতা নেই? সেখানেই লিখে রাখো!’

—‘না, মানে, ইয়ে, ধার-বাকি তো...।’

—‘থামো‌ তো বাপু, পাট উঠলেই ও টাকা পেয়ে যাবে।’

এ ভাবেই চলত কারবার। কিন্তু সেই কারবারে থাবা বসাল মল! নতুন প্রজন্মের কাছে সে যেন চিরবসন্তের দেশ। হিমেল হাওয়ায় যতক্ষণ খুশি থাকা, ইচ্ছে মতো জিনিস দেখার সে এক অদ্ভুত জায়গা। কেউ কিছু নেওয়ার জন্য জোর করে না। সিঁড়ি ভাঙতে হয় না। জিনিসপত্রেরও কত বাহার! কৃষ্ণনগরের এক শপিং মলের এক কর্তা অসিত সেনাপতি বলছেন, ‘‘ইদ ও পুজোয় প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জ থেকেও বহু মানুষ এখন মলে আসছেন। আমরাও চেষ্টা করছি তাঁদের রুচি-পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে।’’

ডোমকলের ব্যবসায়ী নারায়ণ মাহেশ্বরী বলেন, ‘‘ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই তো দোকানে এসি বসালাম।’’

তাতে হয়তো গরম কাটছে। কিন্তু স্বস্তি ফিরছে কি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement