storm

পারদ চড়ছে, উধাও কালবৈশাখী              

তবে কালবৈশাখী এবং সঙ্গে বৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও তাপমাত্রা তুলনায় কম থাকার মতো ঘটনা কিছুটা ব্যতিক্রমী বলেই মনে করছেন কৃষি আবহাওয়া বিশেজ্ঞরা।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

কালবৈশাখী-হীন এমন বৈশাখ বড় একটা দেখা যায় না গাঙ্গেয় সমভূমিতে। বৃষ্টিবিহীন মাঝ বৈশাখের ‘দিনগুলি রাতগুলি’ ঝড়ের অপেক্ষায় ফুরিয়ে গেল প্রায়। এখন সকাল আটটা বাজতে না বাজতেই চড়া রোদ। বেলা একটু বেলা গড়ালেই হাওয়া গরম। পারদের নজর ৩৫-৩৬ ডিগ্রির নীচে নামতেই চাইছে না। এমন পাগলপারা গরমে এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া কিংবা মনের মতো একঘর শীতলতার জন্য মানিব্যাগ, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড কবুল করার উপায় নেই এ বার। কেননা, বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা সংক্রমণের মারাত্মক এই সময়ে এসি, কুলার ন নৈব নৈব চ।
আবহাওয়া দফতরের নথি বলছে, শেষ বার এমন হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে ২০১৭ সালে। সে বার তবু ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি কিছু বৃষ্টি হয়েছিল নদিয়া এবং বর্ধমান বা মুর্শিদাবাদে। তার পর থেকে গোটা এলাকা জুড়ে ঝড়বৃষ্টির দেখা মেলেনি। সে বার চৈত্রের শেষ থেকেই লাগাম ছাড়া তাপমাত্রার পারদ বৈশাখে ৪০ ডিগ্রির আশেপাশে ছিল। এ বার অবস্থা অন্য রকম। সেই অর্থে নদিয়া এবং সংলগ্ন বর্ধমানে শেষ বৃষ্টি হয়েছে অক্টোবর মাসে। দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দুপুরে। তার পর মেঘদূত পাড়া ছাড়া। গোটা চৈত্র পেরিয়ে বৈশাখের মাঝামাঝি এসে সেই অর্থে একটিও পরিপূর্ণ কালবৈশাখী হয়নি। এপ্রিলের মাঝামাঝি একদিন বিকেলের দিকে একপশলা বৃষ্টি সহযোগে যা হয়েছিল তাকে ঝড় না বলে দমকা হাওয়া বলাই সঠিক। যদিও এ বারে তাপমাত্রা তুলনায় অনেকটাই কম। ৩৫ ডিগ্রির আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে। যা ৩৭-৩৮ হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।

Advertisement

তবে কালবৈশাখী এবং সঙ্গে বৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও তাপমাত্রা তুলনায় কম থাকার মতো ঘটনা কিছুটা ব্যতিক্রমী বলেই মনে করছেন কৃষি আবহাওয়া বিশেজ্ঞরা। যদিও গত বছর এই সময়ে দেশ জুড়ে লকডাউন চলায় আবহাওয়া ছিল চমৎকার। নদিয়ার উপ কৃষিঅধিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “গত বছর লকডাউন চলায় কল কারখানা, যানবাহন সব কিছু বন্ধ ছিল। মানুষ ঘরে ছিল। পরিবেশ দূষণমুক্ত ছিল। ফলে, আবহাওয়া স্বাভাবিক আচরণ করেছে। ঠিকমতো কালবৈশাখী, প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এবারে এখনও পর্যন্ত সে ভাবে ঝড়বৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও ভূগর্ভস্থ রস এখনও গাছপালা পাচ্ছে। দেখা যাক সামনের দিনগুলোয় কী হয়।”

তথ্য জানাচ্ছে, ২০২০ সালে নদিয়া ১৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। যা জেলার বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছিল। ২০১৯ সালে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১১০০ মিলিমিটার প্রায়। ২০১৮ সালে ওই পরিমাণ ছিল মাত্র ৯০০ মিলিমিটারের মতো। এ বারে এখনও পর্যন্ত জেলার কোনও অংশেই ২-৩ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রসঙ্গত, গত বছর ২০ মে আছড়ে পড়েছিল বিধ্বংসী সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আমফান। তার প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছিল। যে কারণে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উপচে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে বর্ষাও হয়েছিল পর্যাপ্ত।

Advertisement

নদিয়া সংলগ্ন বর্ধমানের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের কথায় নানা কারণে আবহাওয়ার আমূল বদল ঘটছে গোটা বিশ্ব জুড়ে। যার প্রভাবে প্রকৃতির কোনও আচরণই স্বাভাবিক থাকছে না। যার ফলে চাষআবাদের সামগ্রিক ছবিটাও বদলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “এখন মাঠে পাট, তিল যেমন আছে তেমনই আম, লিচু, কাঁঠালের মরসুম। এখন কালবৈশাখীর হাত ধরে বৃষ্টি আসবে, তবে ওই সব ফসল ফলের বাড়বৃদ্ধি হবে। কিন্ত অবস্থা এখন বেশ সঙ্গীন।”
নিমতলা আদর্শ কৃষিখামারে নথিভুক্ত গত কয়েক বছরে এই সময়ে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে এপ্রিল মাসে এই এলাকায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৭.৮ মিমি প্রায়। ২০১৮ সালে ৯৩.৬ মিমি, ২০১৯ সালে ৫৫.২ মিমি প্রায়। ২০২০ সালে এপ্রিলে বৃষ্টি হয়েছিল ৪৩.২ মিমি। আমফানের দৌলতে যা মে মাসে বেড়ে হয়েছিল ২৯২.৬ মিমি এবং জুন মাসে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার।

এই বছরে এখনও নদিয়া এবং সংলগ্ন অঞ্চলে কম-বেশি ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement