শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষোভ

অপমানিত শিক্ষিকারা

এক শিক্ষিকা জানাচ্ছেন, জেলার হাতেগোনা কিছু বিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে স্যানিটরি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০০:০৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

কলকাতার নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির এক অনুষ্ঠানে কথা হচ্ছিল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি নিয়ে। বৃহস্পতিবার সেখানেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলে বসলেন, ‘‘বিশেষ করে শিক্ষিকারা এত বেশি স্ত্রীরোগে ভুগছেন যে, আমি নিজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। এটা কী হচ্ছে? জেনুইন কিছু থাকলে নিশ্চয়ই বদলি হবে।’’

Advertisement

ওই মন্তব্যের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই বলতেই শুরু করেছেন, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও এক জন মহিলা, সেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষিকাদের নিয়ে এমন অপমানজনক মন্তব্য করেন কী করে? ক্ষুব্ধ শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, মহিলারা নানা সমস্যায় ভোগেন। সেটা মন্ত্রীর জানার কথা। তার পরেও তিনি স্ত্রীরোগ নিয়ে এমন মন্তব্য করে সমস্ত শিক্ষিকাদের অপমান করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতেও শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যর কড়া সমালোচনা করেছেন নেটিজেনরা। ডোমকলের এক শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘শিক্ষিকাদের রোগ হওয়াও কি তা হলে এই যুগে অপরাধের বিষয় হয়ে দাঁড়াল! শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য শোনার পরে আমরাও আতঙ্কিত

Advertisement

হয়ে পড়েছি। এ রাজ্যের বহু শিক্ষিকা কোন পরিস্থিতিতে, কী ভাবে শিক্ষকতা করেন সে খোঁজ কি

মন্ত্রীমশাই রাখেন?’’

কথাটা নেহাত কথার কথা নয়। কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফের বাড়ি ফেরেন রাত ১০টায়— এমন বহু শিক্ষিকা আছেন। অনেক শিক্ষিকাকে বাস কিংবা ট্রেনে দেড়-দু’ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হয়। সীমান্তের স্কুলে যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা জানেন, জলকাদা ডিঙিয়ে, বিএসএফের প্রশ্নবাণ শেষে স্কুলে পৌঁছনোটাই একটা যুদ্ধ।

শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, রাস্তা কিংবা ট্রেনে-বাসে বেশিরভাগ সময় শৌচাগার মেলে না বললেই চলে। আর যদিও বা মেলে সেগুলো ব্যবহারের অনুপযুক্ত। সংক্রমণেরও ভয় থাকে। ঋতুকালীন দিনগুলো তো আরও দুর্বিষহ।

এখনও পর্যন্ত বহু বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্ন শৌচাগার নেই। সংক্রমণের ভয়ে বহু শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের সেই শৌচাগার ব্যবহার না করে পাশের বাড়িতে যেতে বাধ্য হন। স্কুলেও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা নেই। ফলে ছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষিকারাও ঋতুকালীন দিনগুলোতে নানা সমস্যায় ভোগেন।

শিক্ষিকাদের একাংশ জানাচ্ছেন, শিক্ষামন্ত্রী বদলি ইস্যুতে এমন মন্তব্য না করে বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোর দিকে নজর দিলে অনেক সমস্যাই মিটে যায়। তবে শিক্ষা দফতরের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, কিছু সুযোগসন্ধানী অসুস্থতার নাম করেও বদলি-সহ নানা সুযোগ পেতে চান। সেটা বোঝাতে গিয়েই মন্ত্রী এমন মন্তব্য করে ফেলেছেন। সেটাকেই অনেকে

ভুল বুঝছেন।

এক শিক্ষিকা জানাচ্ছেন, জেলার হাতেগোনা কিছু বিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে স্যানিটরি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসিয়েছে। বাকি স্কুলে হঠাৎ করে ঋতু শুরু হলে অনেককেই বাড়ি ছুটতে হয়। স্ত্রীরোগ নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য না করে মন্ত্রী বিদ্যালয়গুলিতে ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করলে উপকার হয়। আর একটা কথা সকলেরই বোঝা দরকার, কেউ কিন্তু শখ করে বদলির আবেদন করেন না। প্রয়োজনেই করেন। সেই আবেদন কতটা ন্যায্য তা শিক্ষা দফতর খতিয়ে দেখতে পারেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী তা নিয়ে মহিলাদের কি অপমান করতে পারেন?

শুক্রবার অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘নজরুল মঞ্চে আমার দেওয়া বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। মহিলাদের সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তাতে যে ভাবে আমার বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে তাতে আমি মর্মাহত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement