প্রতীকী ছবি
চলতি অর্থবর্ষ প্রায় শেষের মুখে। মেরে-কেটে দিন চল্লিশ বাকি। অথচ মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের (চলতি ভাষায় যাকে বলে বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্প) শ্রম বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ থেকে বহু দূরে রয়েছে নদিয়া।
অথচ গত কয়েকটি অর্থবর্ষে এই জেলা লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল। কোনও কোনও অর্থবর্ষে প্রাথমিক ভাবে বেঁধে দেওয়া বাজেটের থেকেও বেশি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল। কয়েক বছর আগে এই বিষয়ে রাজ্যে সেরা ছিল নদিয়াই।
প্রতি বছরই অর্থবর্ষ শুরুর সময়ে প্রত্যেক জেলার জন্য শ্রম বাজেট তৈরি করে দেয় রাজ্য। সংশ্লিষ্ট জেলা সারা বছর কত শ্রম দিবস তৈরি করবে তা উল্লেখ করা থাকে সেই বাজেটে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে নদিয়া জেলায় প্রায় ১ কোটি ১৭ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার মোট ১৮টি ব্লক মিলিয়ে মোটে ৫২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩২৭ শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ অর্থবর্ষ শেষের মুখে বাজেটের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি নদিয়া। জেলায় পরিবার পিছু লোকজন গড়ে কাজ পেয়েছেন ৩৩.৯৩ দিন। অর্থাৎ এখানেও দেখা যাচ্ছে, ১০০ দিন কাজের লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহু দূরে রয়েছে এই জেলা।
সরকারি খাতা বলছে, রানাঘাট ১ ব্লকে পরিবার পিছু সবচেয়ে বেশি দিন কাজ দেওয়া হয়েছে— ৪৮.১২ দিন। তবে তাও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। শ্রম বাজেট অনুযায়ী ওই ব্লককে ৬ লক্ষ ১১ হাজার ২৯০টি শ্রম দিবস তৈরি করতে হত। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ওই ব্লকে মাত্র ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৯১টি শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে। আর সবচেয়ে কম কাজ পেয়েছেন শান্তিপুর ব্লকের মানুষ— মোটে ২১.৫৮ দিন।
সবচেয়ে সন্তোষজনক কাজ হয়েছে করিমপুর ১ ব্লকে। তাদের যেখানে ৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৯১০টি শ্রম দিবস তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল, তারা ইতিমধ্যে ৭ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪৪০টি শ্রম দিবস তৈরি করে ফেলেছে। অর্থাৎ ইতিমধ্যেই ওই ব্লক লক্ষ্যমাত্রার ৮৯ শতাংশ পূরণ করে ফেলেছে। কিন্তু শ্রম বাজেট পূরণের ধারে-কাছেও নেই কালীগঞ্জ, চাকদহ, শান্তিপুর ও হাঁসখালির মতো ব্লকগুলি। হাঁসখালির স্থান তো সবার নীচে। ওই ব্লকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ লক্ষ ৫২ হাজার ৭২৫। সেখানে হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৭৬টি শ্রম দিবস।
শ্রম দিবস বেশি তৈরি হলেও যে পরিবার পিছু কাজ পাওয়ার দিনের সংখ্যা বাড়বে, তা নয়। কোনও ব্লকের তৈরি করা শ্রম দিবসে কত পরিবার কাজ পেল, তার উপর নির্ভর করে সারা বছরে ওই পরিবার কত দিন কাজ পেল। অর্থাৎ শ্রম দিবসকে পরিবারের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করেই একশো দিনের মধ্যে কোনও পরিবার কত দিন কাজ পেল তার হিসেব তৈরি হয়। করিমপুর ১ ব্লক ১৯ হাজার ৯৮৮টি পরিবারের মধ্যে শ্রম দিবস ভাগ করে দেওয়ার ফলে ওই ব্লকে পরিবার পিছু কাজ পাওয়া দিনের সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ওই ব্লকে পরিবার পিছু কর্মদিবস তৈরি হয়েছে ৩৮.৭৪টি। জেলার একাধিক ব্লকের বিডিওরা মনে করছেন, হাতে যা সময় আছে তাতে খুব বেশি হলে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশে পৌঁছনো সম্ভব।
কিন্তু গত ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে যেখানে ১ কোটি ২০ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরি করার কথা ছিল, সেখানে ফেব্রুয়ারিতেই প্রায় ১ কোটি ১৯ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ বাজেটের প্রায় ১০০ শতাংশই অর্থবর্ষ শেষের আগে পূরণ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরির কথা ছিল। ফেব্রুয়ারিতে সেই লক্ষ্যমাত্রার ৮৭.৯১ শতাংশ পূরণ হয়ে গিয়েছিল। তা হলে এ বছর কেন এমনটা হল?
জেলা প্রশাসনের বেশ কিছু অফিসারের মতে, চলতি অর্থবর্ষে কোন-কোন কাজ করা যাবে তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা পরস্পরবিরোধী নির্দেশিকা এসেছিল। ফলে কোনও কাজ করা হবে সেটা স্থির করতেই অনেকটাই সময় লেগে গিয়েছে। আবার ২০০৫ থেকে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ হচ্ছে। ফলে পুকুর কাটা থেকে শুরু করে বহু কাজই হয়ে গিয়েছে। ফলে নতুন নতুন বহু স্কিম তৈরি করে শ্রম দিবস বাড়ানো আর সম্ভব হচ্ছে না। বেশ কিছু পঞ্চায়েতের কর্তাদের মতে, পঞ্চায়েত স্তরে গ্রামসভা ও গ্রাম সংসদের মাধ্যমে শ্রম দিবস স্থির করে বাজেট তৈরি করলে ভাল হয়। তবেই তা বাস্তবমুখী হবে।
তবে নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গোয়েলের দাবি, ‘‘বাংলা আবাস যোজনার কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। ওই প্রকল্পে ঘর পিছু ৯০টি শ্রম দিবস তৈরি করা যায়। ফলে এখনও পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা থেকে জেলা অনেক দূরে রয়েছে। তবে এখনও প্রায় ৪০ দিন সময় হাতে রয়েছে। মনে হয়, অনেকটা শ্রম দিবস বাড়িয়ে ফেলা যাবে।’’