সুতপা চৌধুরীর মেসেও কেউ আর থাকছেন না বলে জানিয়েছেন মেস মালিক অসীম দত্ত। ফাইল চিত্র।
গোরাবাজারের যে মেসে সুশান্ত থাকত ঘটনার আকস্মিকতায় সেই মেস ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাকি আবাসিকরা। সুতপা চৌধুরীর মেসেও কেউ আর থাকছেন না বলে জানিয়েছেন মেস মালিক অসীম দত্ত।
রুটিমহল রোডের সুশান্ত চৌধুরী যে মেসে থাকত, সেখানে ছ’জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। সেখানে বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চার জন পড়ুয়া থাকতেন। একটি ঘরে দুই মেদনীপুরের বাসিন্দার সঙ্গে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের একজন থাকতেন। আর যে ঘরে সুশান্ত থাকতে শুরু করেছিলেন সেই ঘরে মালদা থানার বালুয়াচড়া এলাকার একজন পড়ুয়া থাকতেন। তাদের মাঝখানের চৌকিটা ছিল ফাঁকা। বহরমপুরে কলেজ ছাত্রী খুনে সংবাদমাধ্যম থেকে সমাজ মাধ্যমে সুশান্তর চেহারা দেখে অবাক বাকিরা। তাঁর কার্যকলাপ বিস্তৃত ভাবে উঠে আসার পরে তাদের মেসের ‘অতিথিই’ খুনি তা জেনেও ঘোর কাটছে না ওই আবাসিকদের।
তাঁদের কাছ থেকেই জানা গেল, ওই চার পড়ুয়া এক সঙ্গে হোম ডেলিভারির খাবার খেলেও সুশান্ত তাদের সঙ্গে খেত না। তাদের ধারণা সে ওই ক’দিন মেসের বাইরে থেকেই খাবার খেয়ে আসত। পাশাপাশি যে পড়াশোনার জন্য সুশান্ত মেস ভাড়া নিয়েছিল সেই সংক্রান্ত কোনও পড়াশোনাও সে করত না। সকাল ন’টাতেও সে ঘুমিয়ে থাকত। যেটুকু যা তাঁর ক্রিয়াকলাপ দেখেছেন আবাসিকরা তাঁরা জানিয়েছেন “অধিকাংশ সময় ওই দাদাকে মোবাইল গেম খেলতে দেখেছি।”
সুশান্তকে মালদহের বাসিন্দা তাঁর ঠিকানা বললেও তা সে চিনতে পারেননি বলেই জানিয়েছিল মালদহর বলরামপুর এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত। ওই কলেজ পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে গিয়ে বিকেলের আগেই মেসে ফিরে আসত। সন্ধ্যায় কলেজ ঘাটে হাওয়া খেতে যখন ওই চার বন্ধু বেরোতেন সুশান্তও সেই সময় মেস থেকে বেরোত, কিন্তু কোথায় যেত তার হদিশ তাঁরা পাননি বলেই জানান। তবে মেসবাড়ির নিয়ম মতো রাত দশটার আগেই সে মেসে চলে আসত।
যে ক’দিন সুশান্তকে মেসের আবাসিকেরা দেখেছেন, সেই ক’দিন তাঁর পরনে ছিল একটি লাল জামা ও কালো প্যান্ট। মাঝে মধ্যে খালি গায়ে গামছা পরেও মেসে শুয়ে থাকত সুশান্ত, দাবি ওই আবাসিকদের। তাঁদেরই এক জন জানান, “আমাদের সঙ্গে তেমন কথাই হত না। ব্যবহারও খারাপ করত না। নিজের মতোই থাকতো।” পুলিশ লক-আপেও সে শুয়েই কাটাচ্ছে অধিকাংশ সময়।
জেলা পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, “ধৃতের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে মালদহ যাবে পুলিশের একটি টিম।” তবে সেই টিমের সঙ্গে সুশান্তকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মূলত জেরায় পুলিশকে দেওয়া জবানি মিলিয়ে দেখতে যাবে পুলিশই। কলেজ ছাত্রী খুনে ব্যবহৃত ছুরি সে বাজার থেকেই কিনেছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।