কান্দিতে সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বিজেপির বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শাসকদলের বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র বড়ঞায় বাইক মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে ওই মিছিল আটকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের সঙ্গে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিজেপির এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।
সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযান চলাকালীন নিজের বাড়ির অদূরে পুকুরে মোবাইল ছুড়ে তথ্যপ্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছিল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে দু’দিন ধরে বিস্তর টানাপড়েনও চলে। বিধায়কের ওই পুকুর ‘মন্থন’ করলে দুর্নীতির আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসবে, এমন দাবি তুলে ‘পুকুর শুদ্ধিকরণ’ কর্মসূচির ডাক দেয় বিজেপি। সেই মতো বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ সুকান্তের নেতৃত্বে বড়ঞার আন্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাইক মিছিল শুরু হয়। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মিছিলের গন্তব্য ছিল, বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের বাড়ি। কিন্তু অভিযোগ, সেই মিছিল করতে দেয়নি পুলিশ। এর পরেই সুকান্তের নেতৃত্বে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে পুলিশ দলদাসের মতো আচরণ করছে। সভা-সমিতির সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’’
পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, কোনও অনুমতি ছাড়াই মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। তাই মিছিল করতে দেওয়া হয়নি। বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির সময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন এসডিপিও সঞ্জয় রানা। তিনি বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ বিজেপির অবশ্য পাল্টা দাবি, কোনও আইন ভঙ্গ হয়নি। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই বড়ঞা থানার পিছনে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গেরুয়া শিবির।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘বিজেপি সব সময় নাটক করে। এটাও তার একটা অংশ। পুলিশ অবশ্য পুলিশের কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক।’’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তাঁকে চার দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদালতে তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ‘নিয়োগ দুর্নীতি’তে জীবনকৃষ্ণ অন্যতম চাঁই। তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জীবনের যোগসূত্রও। মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলায় তাঁর প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে বলেও দাবি করেছে তদন্তকারী সংস্থা। পৈতৃক সম্পত্তি থাকলেও জীবন নিজে শিক্ষক। সেই কারণে যে সম্পত্তি মিলেছে, তার উৎস কী এবং গত কয়েক বছরে তা কী হারে বেড়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।