সেজে উঠেছে সুভাষ দ্বীপ। নিজস্ব চিত্র।
লকডাউনে লোকজনের সেভাবে দেখা নেই জঙ্গিপুরের সুভাষদ্বীপে। ফলে নতুন ভাবে সাজিয়েও দ্বীপ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে জঙ্গিপুর পুরসভা। কমপক্ষে ২০ জন কর্মী কাজ করছেন দ্বীপে। কিন্তু আয় দিনে পাঁচ হাজার টাকাও নয়। তাতে কর্মীদের মাইনে দিতেও টান পড়ছে নিজস্ব ভাঁড়ারে। তাই করোনা আবহের মধ্যেই শীতের মরসুমে বিধি মেনে পিকনিকের জন্য দ্বীপ খুলে দিতে চাইছে পুরসভা। তবে সরকারি নির্দেশিকা মেনেই খোলা হবে দ্বীপ।
ভাগীরথী নদীর মধ্যে গজিয়ে ওঠা ৬৪ একর চরের জমিতে কয়েক হাজার গাছের জঙ্গলে ঘেরা রঘুনাথগঞ্জের সুভাষ দ্বীপ। জেলার পর্যটন মানচিত্রে ঠাঁই পেয়েছে এই দ্বীপ। ১৯৯৮ সালে গড়ে ওঠে দ্বীপ। জঙ্গিপুর পুরসভা নিয়ন্ত্রিত এই দ্বীপে প্রায় সারা বছরই লোকজনের যাতায়াত ছিল করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে। সকালে প্রাতঃভ্রমণকারীদের পক্ষেও আদর্শ জায়গা এই দ্বীপ। শতাধিক মানুষ নিয়মিত যেতেন দ্বীপে। প্রতি বছরই শীতের মরসুমে ভিড় উপচে পড়তে দেখা গিয়েছে পিকনিকের। কিন্তু করোনায় লকডাউনের আবহে ভিড় কমেছে অনেকটাই। এমনকি, যে কোনও উৎসবের দিনেও যেখানে লক্ষাধিক টাকা দৈনিক আয় হত টিকিট বিক্রি করে। কিন্তু এ বার করোনার জেরে উৎসবের মরসুমেও বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয় দ্বীপ। ফলে আয়ে যথেষ্ট ঘাটতি হয়েছে এবছর। সেই ঘাটতি কাটাতেই আসন্ন শীতে পিকনিকের জন্য পুরসভা খুলে রাখতে চাইছে দ্বীপের দরজা। সাধারণের কাছে আকর্ষণীয় করতে গত দু’বছরে নতুন সাজে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে সবুজ দ্বীপকে। বসেছে টয় ট্রেন। ভাগীরথীতে নৌকো ভ্রমণের জন্য রয়েছে দাঁড় টানা নৌকো। দ্বীপের কয়েক হাজার গাছের সারিকে নীল-সাদায় রাঙানো হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে বাগান। সারানো হয়েছে শিশুদের বিনোদন পার্ক। পাখিরালয়ে এসেছে নানা ধরনের পাখি। গোটা দ্বীপকে সাজানো হয়েছে নানা জীবজন্তুর বড় বড় মডেল দিয়ে। আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে ফোয়ারা। তবে পুরকর্তাদের আক্ষেপ, বহু চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত আনা যায়নি হরিণ। কিন্তু যাদের জন্য এত আয়োজন করোনা কালে দেখা নেই সেই পর্যটকেরই।
জঙ্গিপুরের পুরপ্রশাসক মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “জেলায় এমন দ্বীপ দ্বিতীয়টি নেই। প্রতি বছরই পিকনিকে ভিড় হয় যথেষ্ট। প্রতিদিন স্বাভাবিক সময়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয় টিকিট বিক্রি করে। লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল দ্বীপ। স্কুল কলেজও বন্ধ। প্রতিদিনের আয়ও তাই অনেক কমে গিয়েছে। আনলক পর্বে লোকজন যা আসে তাতে কতই বা আয় হয়? ২০ জন অস্থায়ী কর্মীর বেতন দেওয়ার টাকা নেই।’’ তিনি জানান, ঠিক হয়েছে পিকনিকের জন্য সুভাষ দ্বীপ খুলে রাখা হবে শীতকালটা। তবে সীমিত পিকনিকের দলকে পিকনিক করার অনুমতি দেওয়া হবে দ্বীপে। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে রান্না-খাওয়া দাওয়া সারতে হবে তাঁদের। প্রত্যেককে মাস্ক পড়ে থাকতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবে তাতেও ৫০টির বেশি দল একদিনে পিকনিক করতে পারবে।