হরিণঘাটার মদনপুর এলাকার ক্যাম্পাস। —ছবি : সংগৃহীত
স্টুডেন্ট অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার ছাড়াই চলছে রাজ্যের একমাত্র প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়। গরুর যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা বন্ধ হয়ে আছে বেশ কয়েক ধরে। ফলে এই রোগে সংক্রমিত হওয়ায় আশঙ্কায় ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে শিক্ষকেরা। বিশেষ করে এরই মধ্যে এক শিক্ষক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সেই আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পড়ুয়ারা।
কিন্তু এই সমস্ত সমস্যার কথা শোনার লোক নেই। কারণ উপাচার্যের দেখা নেই মাসের পর মাস। রেজিস্ট্রারও নিয়মিত আসেন না বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে কার্যত অচলবস্থা তৈরি হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিশারি সায়েন্সেস’-এর মতো প্রতিষ্ঠানে। ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা আন্দোলন শুরু করেছেন। তার জেরে পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে আছে চার দিন। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারছেন না কর্তারা।
এই প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়টি রয়েছে হরিণঘাটার মদনপুর এলাকায়। মোহনপুর ক্যাম্পাসে ডেয়ারি টেকনোলজি ও ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সে পড়ানো হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকেন প্রায় তিনশো পড়ুয়া। মোট পড়ুয়ার সংখ্যা আরও বেশি। বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছিল। এখন সেটা বড় আকার নিয়েছে। বিশ্ববিদ্য়ালয় সূত্রের দাবি, সেখানে গরু মরতে মরতে বর্তমানে ৪০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রতি অবহেলা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বেশ কয়েক বছর ধরে গরুগুলির যক্ষ্মা পরীক্ষা পর্যন্ত হয় না। সম্প্রতি এক শিক্ষক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার পরে পড়ুয়ারা এই নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করেছেন।
তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইদ মির্জার কথায়, “আমাদের এক শিক্ষক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার পরে আমরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, বেশ কয়েক বছর ধরে গরুর যক্ষ্মা পরীক্ষা হচ্ছে না। এটা জানার পর থেকে আমরা সবাই আতঙ্কে আছি। কারণ আমরাও যে কোনও সময় আক্রান্ত হতে পারি।” তাঁর কথায়, “প্রাথমিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে একাধিক গরু যক্ষ্মায় আক্রান্ত। তাদের থেকেই ওই শিক্ষক আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন করেও গরুর যক্ষ্মা পরীক্ষা করাতে পারিনি।” আর এক ছাত্র, টিএমসিপির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সহ-সভাপতি বিশ্বরূপ মাইতির অভিযোগ, “কার কাছে জানাব? উপাচার্যের দেখা নেই প্রায় ১৪ মাস। পদে যোগ দেওয়ার পর তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পা দেননি। রেজিস্ট্রারও নিয়মিত আসেন না।” তাঁর আক্ষেপ, “তহবিলে টাকা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদের জন্য কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না। হস্টেলগুলোর অবস্থা খারাপ। সংস্কারের অভাবে চারদিকে জঙ্গল হয়ে আছে। শুধু কি তা-ই? স্টুডেন্ট অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। তা হলে পঠনপাঠনের কী হাল বুঝতেই পারছেন!”
গত মঙ্গলবার থেকেই টিএমসিপি প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছে। প্রতিবাদ মিছিল বার করা হয়েছে। রেজিস্ট্রার পার্থ দাস বলেন, “আমরা পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছি। সময় চাওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, তার মধ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। বাকিটা উপাচার্য বলতে পারবেন।” উপাচার্য শ্যামসুন্দর ডানাকে একাধিক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।