সঙ্গীতা বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র
বাবা দিনমজুরের কাজ করতেন নানা রাজ্যে। তাই শৈশব থেকে কিশোর কেটেছে নানা জায়গায় ঘুরে। বারবার বদলাতে হয়েছে স্কুল। শেষ পর্যন্ত হরিহরপাড়া থানার অদূরে চোঁয়া হাইস্কুলের সামনে যখন সংসার থিতু হল, সঙ্গীতা বিশ্বাস তখন কিশোরী। বাবা সুশান্তবাবু এক চিলতে পাটকাঠির ছাউনি দেওয়া ঘর তুলেছিলেন। সেটা ২০১৬ সাল। কিন্তু তখন আবার নতুন করে স্কুলে ভর্তি হওয়া হয়নি সঙ্গীতার। একদিন হঠাৎ শুনতে পেল, তার বিয়ে ঠিক করেছেন বাবা। আর তখনই সঙ্গীতা সিদ্ধান্ত নেয়, বিয়ে সে করবে না, বরং পড়াশোনা শুরু করবে আবার।
সুশান্তবাবু মেয়ের কথা শুনতে চাননি তখন। সঙ্গীতা নিজেই যোগাযোগ করে পাড়ার কন্যাশ্রী যোদ্ধা দিদি আশাপূর্ণা বিশ্বাস, অপর্ণা হালদারদের সাথে। তাঁদের উদ্যোগেই তার বিয়ে বন্ধ হয়। পড়াশোনাও শুরু হয় চোঁয়া বিবিপাল বিদ্যানিকেতনে। সেই সঙ্গীতা এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে চোঁয়া বিবিপাল বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী হিসেবে। তার পরীক্ষার আসন পড়েছে সাহাজাদপুর হাইস্কুলে।
আশাপূর্ণা বাড়িতে গিয়ে পড়া দেখিয়ে দিতেন। ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কোঅর্ডিনেটর জাকিরন বিবি বলেন, ‘‘সঙ্গীতাও এখন ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধা দলের সদস্য। সে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে জেনে আমরা সকলেই খুশি।’’
সকালে সঙ্গীতা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তার মা খুকু বিশ্বাস প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে বিয়ে দিয়ে দিলে বড় ক্ষতি হয়ে যেত। একদিন আমাদের মেয়েই আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে।’’ একই বক্তব্য সুশান্তবাবুরও। সঙ্গীতাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছে, ‘‘আমি পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হতে চাই।’’
সঙ্গীতার পাশে রয়েছে ব্লক প্রশাসনও। হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু স্যানাল বলেন, ‘‘সঙ্গীতা যাতে ভাল ভাবে পড়াশোনা করে যেতে পারে, সে জন্য প্রশাসনের তরফে সব রকম ভাবে সহায়তা করা হবে।’’
সুশান্তবাবুও বুঝতে পারছেন, তাঁর মেয়ে ঠিক পথই বেছে নিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘বড় অভাব। তাই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলাম। ঠিক করিনি।’’