ভাঙা ঘর। শমশেরগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র।
জুলাই মাস বর্ষাকাল একটু একটু করে জল গঙ্গায় বাড়ছে। মাঝে মাঝে গঙ্গার পাড়ের মাটি ঝড়ে পড়ছে। শমসেরগঞ্জের ধানঘড়ার মানুষ এটাকে গুরুত্ব দেয়নি। প্রতি বছর বর্ষাকালে এমন হয়ে থাকে। গঙ্গার পাড়ে চাষের জমি বেশ উর্বর তিনটে ফসল হয়। এছাড়াও আম বাগান, লিচু বাগান আছে। জুলাই মাসের শেষের দিকে বেশ কিছু চাষের জমি বসে যায়। তারপর ভাঙন থেমে যায়। গঙ্গা জলে যখন ভরে যায়,স্রোত বেড়ে যায় তখন আগষ্ট মাস হঠাৎ রাত দুটোর সময় ধানঘড়ার পাশের গ্রামে চাষের জমি সহ বিএসএফের চৌকি সহ তিনটি বাড়ি বসে যায়। এরপর আর থেমে থাকেনি গঙ্গা। শিবপুরের পর ধানঘড়ায় ভাঙন শুরু হয়। তলিয়ে যায় চাষের জমি আম বাগান, লিচু বাগান শেষে বসবসের ভিটা। তলিয়ে গেল দোতলা তিনতলা থেকে ছোট ছোট কুটির।
মানুষ হল গৃহহারা। এরপর হিরান্নদপুর তারপর ধুসরিপাড়া। ভাঙন চলে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। নিঃস্ব হয়ে যায় কয়েক শো পরিবার। চলে যায় বসতভিটা। আশ্রয় হয় ফাঁকা আকাশের নিচে। সরকার একটা ত্রিপল দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিসেম্বর মাস কনকনে শীত, গঙ্গার ধারে ত্রিপল খাটিয়ে স্বেচ্ছাসেবিদের দেওয়া একটি কম্বল জড়িয়ে মা ও তার শিশু কোন মতে রাত কাটিয়ে সকালে সূর্যের শরীর গরম করার জন্য বসে পড়ছেন।
এদের মধ্যে ১৩ টি পরিবার একটি প্রাথমিক স্কুলে ও ৫৪ টি পরিবার হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের অনেকের চাষের জমি ছিল তাদের আয়ের উৎস ছিল জমি তাদের জমি এখন জলের তলায়। তারা এখন বেকার। কিছু চাষি কাজের জন্য ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। বড়িতে বুড়ো মা আর স্ত্রীকে একা রেখে। তারা কোন মতে অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন পার করছেন।
স্কুলে যারা আছেন তারা খুব চিন্তিত। কতদিন স্কুলে থাকবে। একদিন তো স্কুল ছাড়তে হবে তখন কোথায় যাবে।গঙ্গা ভাঙনে বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পর থেকেই স্কুলে আছেন শোভারানি সিংহ বলেন, তাদের বাড়ি ও কৃষি জমি এক সঙ্গে ছিল।
তারা সারা বছর বিভিন্ন প্রকার আনাজের চাষ করত। সেই আনাজ বিক্রি করে তাদের সংসার চলে যেত। তার একটি মেয়ে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কী ভাবে পরীক্ষা দিবে তা বুঝতে পারছে না। কোন কাজ নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। সরকার জায়গা দিবে, ঘর করে দিবে এরকম প্রতিশ্রুতি পেয়েছি কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘‘ভাঙনের সময় কত লোক দেখতে এল। সংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত সভাপতি, বিডিও, তারা দেখে চলে গেলেন আর যাওয়ার সময় বলে গেল তারা আমাদের সব দিবে। কী দিবে কখন দিবে তা আর জানা গেল না, কারণ তারাও আর আসে না।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গঙ্গা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি। পুনর্বাসনের জন্য জমি চিহ্নিত করন হয়ে গিয়েছে কিছু সরকারি প্রক্রিয়া বাকি থাকায় একটু সময় লাগছে ক্ষতিগ্রস্তদের জায়গা দেওয়া হবে।’’
শমসেরগঞ্জের বিএলআরও সত্যজিত সিকদার জানালেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তিনটি জায়গা ঠিক করা হয়েছে। তার জরিপের কাজ চলছে। জরিপের কাজ শেষ করে ক্ষতিগ্রস্থদের দেওয়া হবে।