নিজস্ব চিত্র।
স্কুলবাড়ির চারদিক আর আগাছা নেই। বেঞ্চিগুলো থেকে পুরু ধুলোর আস্তরণ সরে গিয়েছে। কিন্তু প্রায় ১১ মাস পরে আজ, শুক্রবার স্কুল খোলার উপরে ছায়া পড়েছে বাম-কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের। ঝামেলা এড়াতে অনেক অভিভাবক কালকের দিনটি এড়িয়ে একেবারে সোমবার থেকে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও স্কুল যথারীতি খোলা হবে বলেই জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ১০টি ছাত্র-যুব সংগঠনের ডাকে নবান্ন অভিযানে পুলিশি লাঠিচার্জের প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিকেল থেকেই করিমপুর, তেহট্ট, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, চাকদহ, রানাঘাট — প্রায় সর্বত্র তার সমর্থনে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ধর্মঘট অগ্রাহ্য করে ছাত্রছাত্রীরা যদি স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাদের কি বাধা দেওয়া হবে? এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদকণণ্ডলীর সদস্য শান্তনু সিংহ বলেন, “আমরা ধর্মঘটের আবেদন জানিয়েছি। কালও আবেদন জানাব। কিন্তু আজকের ঘটনার পরে কোথাও যদি অন্য রকম কিছু ঘটে, তার দায় থাকবে রাজ্য সরকারের।”
বাম-কংগ্রেস যদি ছাত্রছাত্রীদের পথ আটকায়, তৃণমূল ও তার ছাত্র সংগঠন কি পাল্টা পথে নামবে? টিএমসিপি-র কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্রাট পাল বলেন, “আমরা যে কোনও ধর্মঘটের বিরোধী। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী রাজ্য নেতৃত্ব যে নির্দেশ দেবেন, আমরা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করব।’’ বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, স্কুল খোলা থাকবে। ছাত্রছাত্রীরা যদি স্কুলে আসে, যথারীতি ক্লাস হবে।
বিকেলে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে অবশ্য তোড়জোড়টাই চোখে পড়ছিল বেশি। ঝাড়পোঁছ গত কয়েক দিন ধরেই চলেছে। সেই সঙ্গে জীবাণুনাশক ছড়ানো এবং দূরত্ব বিধি মেনে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে বসানোর ব্যবস্থা করা তো আছেই। বেথুয়াডহরি জেসিএম হাইস্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি অংশুমান দে জানান, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় বারশো পড়ুয়ার জন্য ২৭টি ইউনিটে ক্লাস করার ব্যবস্থা হয়েছে। কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলছেন, “আমরা ৬২০ জন পড়ুয়ার জন্য ১১টি ইউনিট করেছি। শিক্ষকের সমস্যা থাকায় এর বেশি করতে পারিনি।” বড় আন্দুলিয়া হাই স্কুলের শিক্ষক অরূপ সরকার জানান, ক্লাসের ফাঁকে পড়ুয়ারা যাতে এক জায়গায় জটলা করতে না পারে সেই দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।”
এত দিন পরে স্কুলমুখো পড়ুয়াদের বাধা দেওয়া হলে আখেরে ছাত্রছাত্রী ও পড়ুয়াদের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে না? সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র দাবি, “বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার প্রশ্নই নেই। আজকের এই আন্দোলন ছাত্রস্বার্থেই। তাই তারা আমাদের সমর্থনই করবে।”