আলো পড়তে অন্ধকারে হারাল সে

অতল পদ্মা রুপোলি রং নিয়ে দিনভর পড়ে আছে, রাতে তার অন্য চেহারা। অন্ধকার নিয়ে তার রাত যাপন, সেই আঁধার পদ্মার মাঝিদের অন্যরকম অভিজ্ঞতা শুনল আনন্দবাজার মাঝ সত্তরের মঙ্গলের দাবি, মাছ ধরতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা তাঁর, কখনও ভুত কখনও জলদস্যু কখনও বা জল-ডাকাতের সামনে পড়তে হয়েছে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:০২
Share:

রাতজাগা চাঁদটা একেবারে মাথার উপরে, ঝিরঝিরে হাওয়ায় ছোট ছোট ঢেউ উঠেছে পদ্মায়। তারা ফুটেছে জলে। ঝিঁঝিঁর ডাক, দুরে সরকার বাড়ির কুকুরটাও কেমন একটা আওয়াজ করছে হাঁক ছাড়ছে ক্রমাগত। জোৎস্না রাত আর হাতে থাকা হ্যারিকেন থাকলেও পদ্মা পাড়ের কবরস্থানের কাছে আসতেই বুকটা কেমন ধড়াস করে উঠল গৌরীপুরের মঙ্গল হালদার। হ্যারিকেনটা উস্কে দিয়ে মনের জোর বাড়িয়ে পা ফেলে কবরস্থান পার করে নদীতে ভাসবেন এমন সময়...

Advertisement

মাঝ সত্তরের মঙ্গলের দাবি, মাছ ধরতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা তাঁর, কখনও ভুত কখনও জলদস্যু কখনও বা জল-ডাকাতের সামনে পড়তে হয়েছে। কিন্তু সেই বছর কুড়ি আগে গোরস্থানের সামনে যে ছবিটা দেখেছিলেন, তা আজও ভুলতে পারেননি। পাড়ার মাচায় বসে বৃদ্ধ মঙ্গল হালদার বলে চলেন— ‘রাত গভীর হয়েছে সেটা আকাশের তারা দেখেই বুঝে ছিলাম। পদ্মা পাড়ে নৌকা বেঁধে হ্যারিকেনটা হাতে নিয়ে হাঁটা ধরলাম। তা বলে গোরস্থানটা তো এড়িয়ে যেতে পারি না। হঠাৎ মানুষটা সামনে এসে দাঁড়াল। জানেন মানুষটার পা মাটিতে নেই, মুখের কাছটাও কুয়াশার মতো ধোঁয়া ধোঁয়া আমি পালানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু হাঁটতে পারছি না। এক্কেবারে গেঁথে গেছে পা। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। সে এক অদ্ভুত ঘটনা।’

সে রাতে নিজেকে টেনে হিঁচড়ে কোনওরকমে যখন বিএসএফ ক্যাম্পের কাছে নিয়ে এসেছিলেন মঙ্গল তখনই তাঁর উপরে পড়েছিল বিএসএফের সার্চ লাইট। মঙ্গল মনে করেন সেই আলোয় পরিস্কার দেখেছিলেন তিনি, পদ্মার জলে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল সেই অশরীরী! সেই রাতের পরে গত বিশ বছরে রাত-পদ্মায় আর মাছের খোঁজে আর যাননা মঙ্গল।ভগবানগোলার সঞ্জয় হালদারের ঝুলিতেও রয়েছে এমনই কিছু ‘অন্যরকম অভিজ্ঞতা’! বলছেন, ‘‘ভূত আছে বলে কখনও বিশ্বাস করতাম না আমি। কিন্তু সেই রাতের ঘটনা আমার সেই বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছ। এখনও চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই ছবিটা। ঘুটঘুটে অন্ধকার, নৌকার ধাক্কায় জলের ছপাৎ ছপাৎ শব্দটা ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই, একাই নৌকা ভাসিয়ে প্রায় মাঝ পদ্মায় পৌঁছে গিয়েছি মাছের নেশায়। নৌকার মাথায় ঝুলতে থাকা লণ্ঠনের আলোটা পদ্মার জল ছোট ছোট ঢেউয়ে পড়ে ছিটকে যাচ্ছে কিছুটা দূরে। জাল ঝেড়ে মাথা তুলতেই দেখি সাদা শাড়ি, এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে জলের ওপরে। কী করব বুঝতে পারছি না, কথা বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। কিছুক্ষণ ঠায় তাকিয়ে থেকে পা কেঁপে উঠল, আমি পড়ে গেলাম ডিঙিতে। জ্ঞান ফিরলে দেখি ভোরের আলো পড়েছে পদ্মার জলে, আর আমি কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি সেটাও বুঝতে পারছি না। দেখলাম, নৌকায় রাতভর ধরা একটি মাছও নেই।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement