সুকান্ত মজুমদারের গাড়ি আটকানোয় জাতীয় সড়কে বসে পড়লেন সুকান্ত মজুমদার। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা যাওয়ার পথে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে আটকে দেওয়ার ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বুধবার ঘটনাস্থলে বিজেপির কর্মী-সমর্থদের উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের দাবি, এদিন বিজেপির কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। আবার সুকান্ত মজুমদারকে আটকানো নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপি নেতারাও। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের আগে সুকান্ত মজুমদারের গ্রেফতার ঘিরে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছে যুযুধান দুই দল।
বুধবার বেলডাঙা যাওয়ার পথে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রিজন ভ্যানে তাঁকে কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে এসে বেশ কিছু সময় বসিয়ে রাখার পর ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকার সহ নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার
করে পুলিশ।
সুকান্তের বেলডাঙা যাওয়ার খবর পেয়ে কৃষ্ণনগরের কাছে দ্বিজেন্দ্র সেতুর আগে জেলা পুলিশের একাধিক পদস্থ কর্তা সহ প্রচুর সংখ্যায় পুলিশ মোতায়ন করা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা জাতীয় সড়কের উপর দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ সুকান্ত মজুমদার আসতেই তাঁর গাড়ি আটকায় পুলিশ। বিজেপি নেতাকর্মী ও সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সুকান্ত জাতীয় সড়কের উপর বসে পড়েন। জাতীয় সড়কের আর একটি লেন আবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি। পুলিশ সুকান্ত মজুমদার সহ অন্যান্য নেতাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এদিকে সুকান্তকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শান্তিপুর ও ধুবুলিয়ায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছিলেন শমীক ভট্টাচার্য সহ জেলার
একাধিক নেতা।
এদিন ঘটনাস্থলে বিজেপির নেতাকর্মীদের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। পুলিশের দাবি, সংখ্যাটা সাকুল্যে ৫০ জন। প্রশ্ন উঠছে, এমন একটি কর্মসূচিতে বিশেষ করে দলের রাজ্য সভাপতিকে আটকে দেওয়ার পাশাপাশি গ্রেফতারের ঘটনায় দলের লোকজন হাজিরা এত কম কেন? যেখানে কদিন আগেই লোকসভা ভোটে এই কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই প্রায় ৫২ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তাহলে কী লোকসভা ভোটে পরাজয়ের পর বিজেপির সংগঠনে ধস নেমেছে?
তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা কমিটির চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, “সুকান্ত মজুমদাররা সব সময় অশান্তি উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে। পশ্চিমবঙ্গে এটা করতে দেওয়া হবে না। ওদের যা লোক হয়েছিল তাতেই পরিষ্কার দলটা উঠে যাওয়ার মুখে।” যদিও বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস বলেন, “আমরা জানতাম সুকান্ত মজুমদারকে মুর্শিদাবাদের আগে পলাশিতে আটকানো হবে। সেইমত সেখানে লোকজন জড়ো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ জানতে পারি, কৃষ্ণনগরে আটকানো হবে। এই অল্প সময়ে যতটা সম্ভব কর্মী সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। তাছাড়া সর্বত্র সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে বলে সবাইকে ডাকা যায়নি।” তাঁর দাবি, “একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে তৃণমূল বুঝিয়ে দিল, তাদের মৃত্যু ঘণ্টা
বেজে গিয়েছে।”