শুকোচ্ছে সরস্বতীর বাহন। কৃষ্ণনগর। নিজস্ব চিত্র।
অবস্থার বিরাট কিছু পরিবর্তন না হলে করোনার জেরা গত বছরের মতো এ বারও সরস্বতী পুজো কার্যত নমো নমো করে হওয়ার কথা স্কুলগুলিতে। নতুন করে কোনও সরকরি নির্দেশিকা না এলে এ বারও সরস্বতী পুজো স্কুলে হলেও পড়ুয়াদের তার থেকে দূরে রাখা হবে বলে জেলার বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন্ধ রাখা হবে পুড়ুয়াদের খাওয়ানোর বিষয়টিও।
এতে প্রশ্ন উঠেছে অন্য। যদি তাই হবে তবে নতুন ক্লাসে ভর্তির সময় সরস্বতী পুজোর চাঁদাবাবদ যে টাকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে তার কী হবে? অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিষয়ে অভিভাবক ও পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কোনও কোনও স্কুল আবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে চাঁদার টাকায় পড়ুয়াদের খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বছরও এই ভাইরাসের কারণে স্কুল-কলেজে পুজো হলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। তাদের বাদ দিয়েই কোনও আড়ম্বর ছাড়াই পুজো হয়েছিল। এ বার করোনার কারণে সেই একই পথে হাঁটতে চাইছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক দিলীপ সিংহ বলছেন, “এখনও পর্যন্ত রাজ্য থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গত বছরের মতো এ বারও স্কুলে স্কুলে করোনা বিধি মেনে সরস্বতী পুজো হবে, কিন্তু পড়ুয়াদের ডাকা হবে না।”
তা হলে চাঁদার হাজার-হাজার টাকার কী হবে? মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক রতন মণ্ডল বলছেন, “টাকাটা আমাদের তহবিলে রাখা থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে আমরা পরে সেই টাকায় পডুয়াদের খাইয়ে দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” আবার জেলা সদরের কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলছেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও পরিচালন সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা টাকাটা পরের বছর খরচ করতে পারি, আবার এ বছরও পরে পড়ুয়াদের খাইয়ে দিতে পারি।” নদিয়া জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক সুকুমার পসারী বলছেন, “রাজ্য থেকে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে যাই হোক না কেন সেটা করোনা বিধি মাথায় রেখে হবে।’’
করিমপুরের একটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যেহেতু গত বছর চাঁদা সংগ্রহ হয়েছিল কিন্তু করোনার জন্য আড়়ম্বরপূর্ণ পুজো সম্ভব হয়নি স্কুলে, তাই গত বছরের চাঁদায় এ বারের পুজো হবে স্কুল চত্বরে। স্কুলে আসলে মানতে হবে করোনাবিধি। এ বারের চাঁদা দিয়ে কী হবে সেটা তার পর ঠিক হবে।
তেহট্টের গ্রামীণ স্কুল নিমতলা বিদ্যানিকেতন ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক সুবোধ বিশ্বাস বলেন, “সরস্বতী পুজোর অনুদান নেওয়া হয়েছে। পুজো স্কুলে হবে। পড়ুয়ারা যাতে আলাদা আলাদা দলে স্কুলে এসে অঞ্জলি দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্কুলে খিচুড়ি খাওয়ানো বা প্রসাদ বিতরণ বন্ধ রাখা হবে।” নন্দনপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলের একটা ঐতিহ্য হল সরস্বতী পুজো। যেখানে পড়ুয়ারা আসবে। অঞ্জলি দেবে ও প্রসাদ খাবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্কুলে বসে গল্পগুজব করাটা হবে না।”