বদলাচ্ছে সভাপতি? বিজেপিতে জল্পনা

আপাতত এই প্রশ্ন নিয়ে জেলা বিজেপি তোলপাড়। করিমপুর উপ-নির্বাচনে চরম সম্ভবনার জায়গায় পৌঁছেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের কাছে লজ্জার হার স্বীকার করতে পারছেন না দলের অধিকাংশ কর্মী।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৯
Share:

প্রতীকী চিত্র

উপনির্বাচনে হারের জেরে ১৪টি মণ্ডলে সভাপতি ইতিমধ্যে বদলে দেওয়া হয়েছে। এ বার কি নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পালা?

Advertisement

আপাতত এই প্রশ্ন নিয়ে জেলা বিজেপি তোলপাড়। করিমপুর উপ-নির্বাচনে চরম সম্ভবনার জায়গায় পৌঁছেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের কাছে লজ্জার হার স্বীকার করতে পারছেন না দলের অধিকাংশ কর্মী। তাঁদের চাঙ্গা করতে বিজেপি নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদলের পথে হাঁটতে পারে বলে আলোচনা চলছে। মহাদেব-বিরোধী গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি ভোটে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ এনেছে। ফল প্রকাশের পর তাঁদের অনেকেই সোস্যাল মিডিয়ায় মহাদেব সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মহাদেব সভাপতি হওয়ার পর থেকে দলের সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। নিজের চেয়ার ধরে রাখতে দলে বিভিন্ন পদে নিজের অনুগামীদের বসিয়েছেন। এমনকি দিন কয়েক আগে ৩৩টি-র মধ্যে যে ১৪টিতে মণ্ডলে সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে সেখানেও মহাদেব নিজের অনুগামীদের কায়দা করে বসিয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। এই মুহুর্তে কেউ তাঁর সামান্য বিরোধিতা করলেই নাকি তাকে দলের ‘সাইড লাইন’এ বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দলের ক্ষুব্ধ অংশের দাবি, ‘‘নিজের আখের গোছাতে মহাদেব জেলায় বিজেপির সর্বনাশ করছেন। এখনই এর সমাধান না-করলে ২০২১-এর ভোটে দলের বিপদ হবে।’’

দলীয় সূত্রে খবর, নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পরিবর্তন না হলে জেলায় দলের অন্দরের গোষ্ঠীকলহ আরও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলায় মহাদেব- বিরোধী গোষ্ঠীর এক নেতার কথায়, “এ বার মহাদেবকে‌ সরিয়েই ছাড়ব। সেই মতো প্রস্তুতিও চলছে।” যার উত্তরে মহাদেব সরকার বলেছেন, “আমি দলের এক জন সামান্য সৈনিক। কোনও দিনই পদের লোভে দল করিনি। করবও না।” তিনি বলেন, “দলে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল। আমি সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করায় সাফল্যও এসেছে দলের। এখন দল যা সিদ্ধান্ত নেমে সেটাই আমি মাথা পেতে নেব।”

Advertisement

মহাদেবের কথায়, উপ-নির্বাচনে তৃণমূল মূলত চাপড়়া, কালীগঞ্জ ও পলাশিপাড়া থেকে বড় লিড দিয়ে জিতেছে। এই তিনটে বিধানসভাই সংখ্যালঘু প্রধান। তাই বিজেপি ভোট টানতে পারেনি। আবার করিমপুরে হার সম্পর্কে তাঁর অনুগামীদের দাবি, ৪২ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের পাশাপাশি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার নাকি নিজের মতো করে ভোট পরিচালনা করেছেন, দলের জেলা সংগঠনকে ও নেতৃত্বকে সে ভাবে কাজে লাগাননি। এর ফল ভুগতে হয়েছে।

মহাদেব সরকারের লোকজন রাজ্য নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাঁদের দাবি, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন মহাদেব। তার পর থেকে তিনি পরিশ্রম করে সংগঠনকে চাঙ্গা করেছেন। পঞ্চায়েত ভোটে এ বার প্রথম নদিয়া জেলায় দু’টি জেলা পরিষদের আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। দুটোই তাঁর সাংগঠনিক জেলার মধ্যে। উত্তর সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৬টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৫৬৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। প্রায় ৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল দল। ফলে মহাদেবের বিরুদ্ধে অযথা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ আনা হচ্ছে।

নদিয়া জেলায় বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল দীর্ঘ দিনের। জেলা ভাগ হয়ে যাওয়ার পরও সেই কোন্দল থামেনি। নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলায় সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও জেলা সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায়ের অনুগামীদের গোলমাল মাঝে মধ্যেই প্রকাশ্যে চলে আসে। কিন্তু উত্তর সাংগঠনিক জেলার মধ্যে গোষ্ঠী লড়াই এতদিন ধামাচাপা ছিল। করিমপুরের ভোটের পর তা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। সেই সঙ্গে তলায় তলায় মহাদেব সরকারকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য একাংশ মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু করেছে বলে দলের একাংশের অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement