আঁধার-আলোয়: মঙ্গলবার বহরমপুরের বানজেটিয়ায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
শব্দবাজির চোরা দাপটের আশঙ্কা ছিলই গত কয়েক বছর ধরে সঙ্গে দোসর হয়েছে জুয়ার আসর।
কালী পুজোর দিন কয়েক আগে থেকেই, গত কয়েক বছর ধরে তাই জেলা পুলিশের কপালে বাঁজ ফেলে যায় জুয়ার রমরমা। শহরের বিভিন্ন ঠেক থেকে গ্রামের আনাচ কানাচে পুলিশের উঁকিঝুঁকি তাই বেড়ে গিয়েছে এ বারও। নিষিদ্ধ বাজির কারবারের মতো অন্ধকারে জুয়ার নিশ্চুপ ঠেক বসছে না তো!
জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘জুয়া খেলায় লাখ লাখ টাকা ওড়াই নয়, জুয়া খেলাকে ঘিরে মারপিট হাঙ্গামার নজিরও কম নেই। তাই এই হানাহানির আশঙ্কায় আমাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরমপুরে মূলত তাস ও ‘ঝান্ডি, মুন্ডি’র আড়ালেই জুয়ার আসর বসে। জনা দশেকের মাথা নিশ্চুপে তাস খেলছে দেখলেই তাই পুলিশের পা পড়ছে— তা সে মণ্ডপের আড়ালই হোক কিংবা বন্ধ ক্লাবের টেবিল। এর সঙ্গে রয়েছে, পরিত্যক্ত বাড়ি, ভাঙা চোরা সরকারি আবাসন, নিস্তব্ধ বাগান। এমনকি বসতবাড়িও।
জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ও জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান এ বারও চলছে। গত এক সপ্তাহে শুধুমাত্র বহরমপুর থানা এলাকায় জুয়া খেলার জন্য ৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জুয়ার আসর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা।’’ তাঁর দাবি, নিষিদ্ধ শব্দবাজি, জুয়া বন্ধে কালীপুজোর রাতেও জেলাজুড়ে পুলিশের অতিরিক্ত নজরদারি থাকবে। সে জন্য জেলা গোয়েন্দা দফতরকেও সতর্ক করা হয়েছে।
পুলিশ সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, বছরের অন্য সময় জুয়ার আসর কম বসে। কালীপুজোকে কেন্দ্র করে, এক সপ্তাহ আগে থেকে জুয়া খেলা বেড়ে যায়। তবে কালীপুজোর রাতে সব থেকে বেশি জুয়ার আসর বসে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, অনেকের ধারণা আছে কালীপুজোর রাতে জুয়া খেলে জিতে গেলে সে জয়ের অভ্যাস বজায় থাকে বছরভর। অনেকে একে শুভ বলেও ভাবে। এই ধারণা থেকে অনেকেই বছরে এই দিনটায় খানিক জুয়া-ভাগ্য নিয়ে মেতে ওঠে। জয়ের উগ্র নেশা থেকে বচসাও বেধে যায় অচিরেই। যা হাতাহাতিতে গড়াতে বিশেষ সময় নেয় না।
বহরমপুরের খাগড়া, কাশিমবাজার, বানজেটিয়া, হাতিনগর, ভাকুড়ি এলাকায় জুয়ার আসরের রমরমা বলেই জানাচ্ছে পুলিশ। গত এক সপ্তাহে বহরমপুরের ধোপঘাটি, সুন্দর কলোনি, বানজেটিয়া, পশ্চিম গামিনী, ভাকুড়ির ঠাকুরপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ জুয়া খেলার অভিযোগে অন্তত ৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কালীপুজোর রাতে আর নজরদারি বাড়ান হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, জুয়ার আসরে জুয়াড়িদের মধ্যে প্রায় মারপিট হয়। এমনকি খুনোখুনি পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া জুয়া খেলার ফলে পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। হেরে যাওয়ার পরে বাড়ি ফিরে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে যেমন অশান্তি পাকায়, তেমনি টাকার জন্য চুরি ছিনতাই করে।
তবে গত বছর কালীপুজোর রাতে বহরমপুরের হাতিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিমতলা ডাঙাপাড়ায় জুয়ার আসরে গুলিও চলেছিল। সেখানে তাস খেলার আড়ালে জুয়ার আসর বসেছিল। হানা দিয়েছিল পুলিশ। আর পালানোর সময়েই চলেছিল গুলি। সে ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি রুখতেই এ বার তাই বাড়তি সতর্ক পুলিশ।