সৌমিক হোসেন—ফাইল চিত্র।
তাঁর রাজনৈতিক জীবন যেন জোয়ার ভাটার মতো। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সৌমিক হোসেনের উত্থান। আর নিন্দুকেরা বলেন জেলায় শুভেন্দু অধিকারীর আগমনে তার পতন। তৃণমূলে পা রেখে সৌমিক জোয়ারের মত আছড়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার রাজনীতির ময়দানে। আর জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারী পেতেই ভাটার টান শুরু। জেলা তৃণমূলের একাংশের নেতাদের দাবি, নানা ক্ষেত্রে সৌমিক হোসেনের লাগাম টেনে ধরেছে শুভেন্দু। এমনকি ডোমকল পুরসভার পুর প্রধানের পদ থেকেও সরে যেতে হয়েছে তাকে শুভেন্দু অধিকারীর ইশারাতেই।
কিন্তু বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে যে ৬ জন ডাক পেয়েছিলেন তার পর থেকেই জেলা জুড়ে মধ্যে ছিলেন সৌমিক। ফলে তার এই ডাক পাওয়ার পর থেকেই দিনভর জেলাজুড়ে শুরু হয়েছিল গুঞ্জন। সৌমিক কি তাহলে আবারও গুরুত্বপূর্ণ কোনও দায়িত্ব পেতে চলেছে? জেলার রাজনীতিতে কি বড় কোনও রদবদল আসতে চলেছে? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও শেষ পর্যন্ত বড় কোনও চমক পায়নি জেলার মানুষ। তবে বড় চমক না থাকলেও দলের সাংসদ খলিলুর রহমান, অশোক দাস, এবং অরিত মজুমদারের সঙ্গে জেলার কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সৌমিককে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সৌমিক শিবিরে খুশির হাওয়া। যদিও রাজনীতিতে কিছুটা পরিণত সৌমিক এখন এ নিয়ে আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে নারাজ। তার কথায়, ‘‘আমার নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগেও তাঁরা যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি, এদিন যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটাও অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’’ সৌমিকের আরও দাবি, ‘‘যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ বলবেন তাদের পাশে আমি আছি। পুরানো তৃণমূল কর্মীদের অপমান আমি কোনও ভাবেই মেনে নেব না।’’ আর যারা শুভেন্দু অধিকারী জিন্দাবাদ বলবে? এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না। আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে দু'জনকেই চিনি বলেই মৃদু হাসছেন সৌমিক। গোটা রাজ্য থেকেই জেলা পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে তৃণমূল সূত্রে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুর্শিদাবাদ জেলায় শুভেন্দু অধিকারীর আর ছড়ি ঘুরবে না এমনটাই দাবি, রাজনৈতিক মহলের। আর সেটা আজ করে খুশির হাওয়া সৌমিক শিবিরের।
দলের বিরোধী শিবিরের দাবি, সৌমিকের কখনও জনসমর্থন বলে কিছু ছিল না, আজও নেই। শুভেন্দু যেভাবে জেলায় সংগঠনকে দাবার গুটির মতো সাজিয়েছে তাতে সৌমিকের পক্ষে নতুন করে জমি তৈরি করা কঠিন কাজ হবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘সৌমিক যদি দায়িত্ব পেয়ে আবারও সেই আগের মতোই দাম্ভিকতার সঙ্গে রাজনীতি করব তাহলে আবারও বড় ভুল করবে।’’