বিদুৎ বিলের ক্ষেত্রেও ছাড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতীকী ছবি।
দুর্গাপুজোর জন্য ক্লাবগুলিকে অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। তবে এই জেলাতেই অনেক বড় বাজেটের পুজো রয়েছে। আগে থেকেই তাদের বাজেট বেশ বড় অঙ্কের। সে ক্ষেত্রে তাদের ক্ষেত্রে এই অনুদান জরুরি কি না সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে পুজো উদ্যোক্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, করোনা কালে চাঁদার পরিমাণ যেমন কমেছে, তেমনই কোভিড বিধি মানতে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ, মণ্ডপে সেই সংক্রান্ত সচেতনতামূলক প্রচারের পাশাপাশি এ বারে র্যালি এবং কার্নিভালের আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে একটা বড় খরচ রয়েছে। সরকারি অনুদান পেলে তাতে সুবিধা হবে বলে দাবি পুজো উদ্যোক্তাদের।
সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন দুর্গাপুজোর জন্য উদ্যোক্তারা সরকারি অনুদান এবার আগের থেকে বেশি পাবেন। অনুদান বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। পাশাপাশি বিদুৎ বিলের ক্ষেত্রেও ছাড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় অনুমোদনপ্রাপ্ত পুজোর সংখ্যা প্রায় দুই হাজারের মতো। সরকারি নথিভুক্ত ক্লাব বা সংস্থা যারা দুর্গাপুজো করেন তারা এই অনুদান পাবে। পুজোর জন্য পুলিশ, দমকল ইত্যাদি প্রশাসনিক অনুমতি-সহ আবেদন করতে হবে অনুদানের জন্য।
সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা চালু হয়েছে সম্প্রতি। তার আগে বড় বাজেটেই পুজো করেছে জেলার বহু ক্লাব। সে ক্ষেত্রে এই অনুদান জরুরি কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, অতিমারির কারণে খরচ বেড়েছে। পুজোয় কোভিড বিধি মানতে স্যানিটাইজার, মাস্কের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। সেখানে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় হয়েছে ও হবে। আবার এ বারে পুজোর র্যালি, কার্নিভালের আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। সেখানেও বড় অঙ্কের টাকা খরচ হবে। এই বাড়তি খরচ সামলাতে সরকারি অনুদান সহায়ক হবে বলে ভাবছেন কেউ কেউ। বড় বাজেটের পুজোর জন্য বাদকুল্লার অনামী ক্লাব বিখ্যাত। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রী পাল বলেন, “সদস্যেরা নিজেরা যে চাঁদা দিই এই সময়ে তার পরিমাণ কমেছে অনেক। আবার কোভিড বিধি মানতে নানা ব্যবস্থা, মণ্ডপে সচেতনতামূলক প্রচার ইত্যাদি রয়েছে। ফলে খরচ বেড়েছে। কার্নিভাল, র্যালির জন্যও বড় খরচ আছে। এই অনুদান না-পেলে খরচ কুলিয়ে ওঠা কঠিন।”
বেথুয়াডহরির কসমস পুজো কমিটির সম্পাদক প্রতাপ বারুই বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে ওই টাকা আমাদের খুবই প্রয়োজনের। তবে র্যালি বার করা এবং কার্নিভাল করতে গেলে যে খরচ তাতে এই টাকা কিছুই নয়।’’
অনুদান ভাল ভাবে পুজোর আয়োজনে সহায়ক হবে বলেও মনে করছেনকেউ কেউ। বেতাই শ্রীশ্রী দুর্গা সেবা সঙ্ঘের সম্পাদক শঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনুদান পেলে প্রত্যন্ত গ্রামের পুজো মণ্ডপ আরও ঝলমলে হয়ে উঠবে।’’ চাকদহ প্রান্তিক ক্লাবের সম্পাদক সৌমিত্র ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘লকডাউনের জন্য এখন আর সে ভাবে চাঁদা পাওয়া যায় না। এই অনুদান আমাদের মতো ক্লাবের পুজোয় অনেক সাহায্য করবে।’’
তবে এই অনুদানের পিছনে রাজনীতি দেখছে বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি তথা রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলছেন, “রাজ্য সরকারের ভাঁড়ারে টাকা নেই। নিয়োগ নেই। ডিএ দিতে পারছে না। উন্নয়নের কাজও ব্যাহত হচ্ছে। নেতা,মন্ত্রীরা দুর্নীতিতে ফাঁসছেন। তখন মানুষের নজর ঘোরাতে এই অনুদানের ঘোষণা। এ সবই ভোটের দিকে তাকিয়ে।”
জবাবে নদিয়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তৃণমূলের দীপক বসু বলেন, “আমাদের দুর্গাপুজো বিশ্ব দরবারে বন্দিত হয়েছে। আর এই উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব। তাকে বিশ্বের দরবারে আরও ভাল ভাবে তুলে ধরার জন্য সরকার সহায়তা করছে। যাঁরা সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি খোঁজেন, তাঁরা এর মধ্যেও রাজনীতি খুঁজছেন।”