তল্লাশি চলছে।
লকডাউন শিথিল হয়ে আসতেই আঁধার পথ আবার অশান্ত হয়ে উঠছে।
অন্ধকার ফুঁড়ে চলে গিয়েছে আদিগন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, রাস্তার দু’দিকে ঘন পাট খেত। বেলডাঙার ছেতিয়ান এলাকায় সেই সড়কে গাছের ডাল কিংবা লম্বা চেনের অনুশাসনে গাড়ি গতি কমিয়েশুরু হয়েছে ছিনতাই।
চালককে নামিয়ে মারধর। কখনও বা গলায় ছুরি ধরে অবাধে চলছে লুট। টাকা-মোবাইল গাড়িতে থাকা জিনিসপত্র, ব্যাটারি কখনও বা পণ্যবাহী ট্রাকের সামগ্রী। দিন কয়েক আগে এমনই এক মিনি ট্রাক আটকে প্যাকিং বাক্স সমেত এলইডি টিভিও নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। জাতীয় সড়কে মরাদিঘি ও ছেতিয়ানির মাঝে ১৮০ টি এলইডি টিভি সেট ছিনিয়ে নেওয়ার ওই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। আটকও করা হয়েছে চার জনকে। তবে বেলডাঙার পুলিশ নিশ্চিত নয়, ধৃতেরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। জাতীয় সড়কে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ওই এলাকায় শেষ কবে হয়েছে, মনে করতে পারছে না পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানাচ্ছেন, দিনের পর দিন নিশ্চিন্তে তাঁরা ঘরে ফিরেছেন ওই পথ ধরেই। তা হলে? উত্তরটা দিচ্ছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা, ‘‘সহজ সত্যিটা হল লকডাউন। যার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কারখানা, মাঠের কাজ, বন্ধ হয়ে গেছে দোকানপাট, মুদিখানা থেকে সাইকেল সারিয়ের দোকানও। কাজ হারানো এলাকায় অপরাধ তো এই সময়েই বাড়ে!’’ তাঁর অনুমান যে ভুল নয়, মনে করিয়ে দিচ্ছেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অনির্বাণ রাহা। তিনি বলেন, ‘‘রুজিতে টান পড়ে বলেই মানুষ ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়, ভিন জেলায় মুনিশ খাটতে যায়। এখন সব দুয়ার বন্ধ। হয়ত দেখবেন নিতান্তই সাধারণ মানুষ পেটের দায়ে রুজির এই সহজ উপায় খুঁজছেন। এ ভাবেই তো সমাজ অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়ে।’’
পুলিশ থেকে সমাজজীবন নিয়ে কাজ করা শিক্ষক সকলেই মনে করছেন— রোজগারহীন সমাজে পেটের টানেই মানুষ নানান অপরাধের দিকে ঝুঁকছে। খতিয়ানটা পুলিশের খাতা দেখলেই স্পষ্ট হয়। ছিনতাই তো দূর অস্ত, যে এলাকায় গত দু’বছরে বড় মাপের কোনও চুরি-ছিনতাই ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি, গত আড়াই মাসে রোজগার-শূন্য আবহে সেখানেই বাড়বৃদ্ধি ঘটছে ছিনতাইয়ের। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রাক্তন এক কর্তা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘অর্থনীতি পড়ে গেলে যখন রোজগারের সব পথ একে একে বন্ধ হয়ে যায়, তখন অপরাধের নতুন দরজা খোলে। সেই তালিকায় প্রথম দিকেই ঠাঁই পায় ছিনতাই, এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যায়।’’ তিনি মনে করেন, ‘চুরির বিদ্যে’ জানা না থাকলে সে পথে নামতে সাহস পায় না মানুষ। ডাকাতির জন্য অস্ত্র প্রয়োজন। প্রয়োজন বড়সড় দল গড়ার। তুলনায় দু’চারজন মিলে ছিনতাই অনেক সহজ। হয়ত সে কারণেই এলাকায় গাড়ি থামিয়ে নতুন ‘রুজির রাস্তা’ খুঁজছে কর্মহীন লোকজন।