রাত শেষ হয়ে সবে ভোরের আলো ফুটছে। কিন্তু কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের দাদপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি সঙ্কীর্ণ এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা পিকআপ ভ্যানকে দেখতেই পায়নি পিছন থেকে ধেয়ে আসা একটি ট্রাক। শেষ মুহূর্তে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও সজোরে ধাক্কা লাগে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই পিক আপ ভ্যানের চার যাত্রী সোমা মালাকার (২৯), তাঁর ছেলে সূর্য মালাকার(১২), শিল্পী মণ্ডল (৪০) ও ইলারানি সরকার(৫৫)। ভ্যানটিতে মোট ১৫ জন ছিলেন। বাকিদের বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের নাম শীলা দাস (৫০) ও তাঁর ছেলে সমীর দাস (২৮)। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ৮ জন। সকলেই নদিয়ার রানাঘাট ও তাহেরপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা অনেকেই পেশায় মণ্ডপ শিল্পী।
রানাঘাট থেকে রাত থাকতে বেরিয়ে তাঁরা যাচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদের লালবাগে পিকনিক করতে। যাতে তাড়াতাড়ি পৌঁছে পিকনিক করে হাজারদুয়ারি দেখে আবার রাতের মধ্যেই প্রায় সোয়াশো কিলোমিটার দূরের রানাঘাটে ফিরে যেতে পারেন। পরিকল্পনা মতোই গাড়ি ছেড়েছিল রাত দু’টোয়। ভোর পাঁচটা নাগাদ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে দাদপুরের কাছে এসে রাস্তার এক রকম উপরেই গাড়ি দাঁড় করানো হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ওই জায়গাটিতে জাতীয় সড়ক এমনিতেই সঙ্কীর্ণ। তার উপরে ভোরের কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সমীর মালাকার নামে এক যাত্রী শোচকর্মের জন্য গাড়ি থেকে নামেন। ঠিক সেই সময় পেছন থেকে আসে একটি বেলডাঙাগামী ট্রাক। প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা লাগার পরে ছিটকে যায় ট্রাকটিও। আওয়াজ শুনে এলাকার লোকজন ছুটে আসেন। তাঁরাই আহতদের উদ্ধারে প্রথম হাত লাগান। পরে খবর যায় রানাঘাটে। সেখান থেকে তাঁদের বাড়ির লোকেরা চলে আসেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। পুলিশ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে কার্তিক মণ্ডল, প্রদ্যুৎ মণ্ডল, সোমনাথ মজুমদার, নীলিমা মণ্ডল, বাবান মণ্ডল, রূপম মণ্ডল হাসপাতালে গুরুতর জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
গত কয়েক মাসে এই এলাকাতেই কয়েকটি দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৩ জন জখম হয়েছেন। এই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক ক্ষেত্রে পথে নেমেছে পুলিশ। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার কে শরবী রাজকুমার বলেন, “রাস্তাটা দুই লেনের। ছোট রাস্তা, কিন্তু সেখানে গাড়িটা পাশে না রেখে রাস্তার উপরে রাখা হয়েছিল। আমি এলাকায় গিয়ে দেখেছি। সেই সঙ্গে আলো কম ছিল, আংশিক কুয়াশাও ছিল। সব মিলে এই দুর্ঘটনা। তবে আর যাতে এমন না ঘটে, সকলকে সজাগ করা হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে প্রতিদিন জাতীয় সড়কে সারা রাত পুলিশ পেট্রলিং করে। সোমবার রাতেও ছিল। মঙ্গলবার দুর্ঘটনা ঘটার সময় দুর্ঘটনা স্থলের কাছেই পুলিশ ছিল। রেজিনগর থানা জানিয়েছে, এদিনের দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেখানে পৌঁছে যায়। পুলিশের গাড়িতেই জখম ব্যক্তিদের বেলডাঙা ও বহরমপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর এই মরাদিঘিতে বাসের সঙ্গে প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়। তারা মালদহ থেকে আসছিলেন তাদের গন্তব্য ছিল নদিয়ার শান্তিপুর। গত ২৫ সেপ্টেম্বর মরাদিঘিতে বাস ও ট্রাকের ধাক্কায় ৮ জন জখম হয়। গত ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে বিয়ের গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়। বিয়ের গাড়িটি বেলডাঙার জালালপুর থেকে রেজিনগর যাচ্ছিল। ২০১৯ সালের মার্চে শিবের প্রসাদ বিতরণ করে ফেরার পথে মোটর গাড়ি দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়।