জাফিকুল ইসলামের কলেজ। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যে বাড়িটা উঠে এসেছিল খবরের শিরোনামে, যে বাড়ির ছবি ঘুরপাক খেয়েছিল মোবাইলের স্ক্রিনে স্ক্রিনে, সিবিআই কর্তা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের পাশাপাশি যে বাড়ির সামনে হাজির হয়েছিল উৎসুক জনতা, শুক্রবার সকাল থেকেই কিন্তু ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের গোবিন্দপুর এলাকায় সেই বাড়ি ছিল থমথমে।
এর মধ্যেই খবর এসেছে, বৃহস্পতিবারের অভিযানে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা ছাড়াও ১০০ গ্রামের কিছুটা বেশি সোনাও উদ্ধার হয়েছে বিধায়কের বাড়ি থেকে। বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘জমি বিক্রি করার ২৪ লক্ষ ১২ হাজার টাকা ও প্রায় ১১ ভরি সোনার গয়না আমার বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছে সিবিআই। তা ছাড়া কিছু কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছেন তাঁরা।’’ তবে তাঁর দাবি, ‘‘আমার কাছে ওই টাকা গয়না ছাড়াও কাগজপত্রের যাবতীয় তথ্য আছে। আমি আইনি পথে হেঁটে সেগুলো ফেরতের জন্য আবেদন করব।"
তবে এ দিন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা বার কয়েক ঘুরপাক খেলেও বাড়ির সামনে অন্য কোনও মুখের দেখা মেলেনি। একই অবস্থা ছিল তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। খাতায় কলমে কলেজ খোলা থাকলেও এদিন কলেজ চত্বরে দেখা মেলেনি কারও। একেবারে শুনশান চেহারা ছিল সেখানকার। প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব দরজায় ছিল তালা ঝোলানো। যদিও জাফিকুলের দাবি, ‘‘কলেজ তো বন্ধ থাকার কথা নয়, কী হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি। তবে পরীক্ষার পরে ছাত্রছাত্রীরা আসছেন না। শিক্ষকরাও তাদের সাংগঠনিক কাজে কলকাতা গিয়েছেন।’’ যদিও এলাকার মানুষের দাবি, গতকাল সিবিআইয়ের থাবার পরেই কলেজে আর কেউ পা রাখতে চাইছে না। ফলে শুনশান হয়ে গিয়েছে কলেজ চত্বর।
আর যে বাড়ি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গমগম করে কর্মী সমর্থকদের ভিড়ে, যে বাড়িতে প্রায় দিন শতাধিক মানুষ সাহায্যের আশায় হাত বাড়ান, সেই বাড়িটার চেহারাই যেন বদলে গিয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। দিনভর সিবিআইয়ের তল্লাশিতে বিধায়কের বাড়ির মূল ফটক থেকে অন্যান্য দরজা জানালা বন্ধ থেকেছে। কর্মী সমর্থক থেকে আত্মীয়-স্বজনরা বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি মেলেনি। তবে শুক্রবার বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষীরা এসেছেন বাড়িতে। সমবেদনা জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের। জনা কয়েক কর্মী সমর্থকও এসে বিধায়কের না দেখা পেয়ে ফিরে গিয়েছেন। তাঁর আত্মীয়দের দাবি, পুরোপুরি রাজনৈতিক কারণেই ফাঁসানো হয়েছে জাফিকুল ইসলামকে। রাজনীতিতে পা না রাখলে এই আক্রমণ তাঁর উপর হতো না। খোদ বিধায়ক জাফিকুল ইসলামও সেই একই দাবি করেছেন। তার বক্তব্য, "তৃণমূল করব আর সিবিআই বাড়িতে আসবে না তাই হয় নাকি। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ওদের (বিজেপি) রুটিন প্রোগ্রামের মধ্যে আমরা পড়ে যাচ্ছি। ভোটের আগে যেমন বিজেপির নেতারা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছিল রাজ্যে, এখন সিবিআই ডেলি প্যাসেনঞ্জারি করছে।"
তবে তাঁর বাড়িতে সিবিআই এর হানা নিয়ে বিরোধী মহলে যেমন খুশির হাওয়া, তেমন ভাবে তৃণমূলের একাংশ নেতারাও মুচকি হাসছেন।
তাঁদের দাবি, খুব কম সময়ে রাজনীতিতে বড় উত্থানের ফলে নিজেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভাবছিলেন বিধায়ক। আদতে তিনি বাঘ না বিড়াল সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যে। ডোমকলের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘‘খেলা হবে স্লোগান ওদের তৈরি, আর এখন সেই খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। সবে শুরু, এখন খেলায় কতটা গোল হয়, আর কে অফসাইড হয় সেটাই দেখার।’’ যদিও জফিকুল ঘনিষ্ঠদের দাবি, বিধায়ককে ছোট করার অনেক কৌশল এর আগেও করেছে বিরোধী থেকে তৃণমূলের একাংশ। পুরপ্রধান থেকে পুর প্রশাসক না হতে দেওয়ার জন্য, বিধায়কের টিকিট যেন না পান, তার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়ানো হয়েছে। এমনকি তাকে নির্বাচনে ‘ফেল করানোর’ও বড় চক্রান্ত করেছিল দলেরই একাংশ। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই বিফল হয়েছে তারা, এবারও তাদের চক্রান্ত বিফলে যাবে।