প্লাস্টিক বিরোধী: কৃষ্ণনগরে হস্তশিল্প মেলায় অভিযান মহকুমাশাসকের। নিজস্ব চিত্র
“দাদা, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগগুলো দিয়ে দিন।”
কথা শুনে ক্রেতাকে জিনিস দিতে দিতে থমকে গেল বিক্রেতার হাত। দোকানের সামনের এক চিলতে জায়গায় ততক্ষণে হাত বাড়িয়ে সেগুলো হাতে তুলে নিয়েছেন শান্তিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল যতন সরকার। দোকানে রাখা চালের স্তূপ আর তার একপাশেই রাখা ছিল প্লাস্টিকের ক্যারিবাগ।
যতনের প্রশ্ন, “এগুলো তো রাখতে বারণ করা হয়েছিল আপনাদের। বারবার বলা সত্ত্বেও শুনছেন না কেন আপনারা? নিন এ বার জরিমানা দিন।”
ততক্ষণে এগিয়ে এসেছেন পাশে দাঁড়ানো পুরসভার এক আধিকারিক। বিক্রেতা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, এরপর আর হবে না। এগুলো অনেক আগে আনা। এ বার ফেলে দেবেন। কিন্তু তা মানতে নারাজ পুর আধিকারিকেরা। জানান, সময় দেওয়া হয়েছিল আগেই। এরপরও তাঁরা শোনেননি। এ বার জরিমানা দিতে হবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখান থেকে জরিমানা আদায়ের পরে গাড়ি ছুটল স্টেশনের কাছে বাজার এলাকায়। তার কিছু সময় আগেই পুর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি ফোন আসে। সেখানেই জানানো হয় এই বাজারে কিছু জায়গায় প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে একাধিক দোকানে দেখা গেল প্লাস্টিকের কাপ ইত্যাদি জিনিস সাজানো। পুরসভার দলকে দেখেই অনেকেই জানালেন, এখনই ফেলে দিচ্ছেন। তবে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই ৫০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করলেন পুর কর্তৃপক্ষ। দুপুর সোয়া ১টা নাগাদ তাঁরা পৌছান শান্তিপুরের নতুন হাটে। গাড়ি থেকে নেমেই একটি দোকানের সামনে ব্যাগের মধ্যে রাখা প্লাস্টিকের কাপ বার করে ফেলেন। দোকানদার অবশ্য তখন পাশের কাগজের কাপ তুলে ধরে জানান, প্লাস্টিকের কাপ অনেক আগে এনে রাখা। এখন বিক্রি করছেন না। এখন কাগজের কাপ বিক্রি করছেন। তবে ততক্ষণে তাঁর হাতে জরিমানার রসিদ ধরিয়ে দিয়েছেন পুরকর্তারা। শেষ পর্যন্ত জরিমানা দিতে হল তাঁকে।
বৃহস্পতিবারের বারবেলায় শান্তিপুরের একাধিক বাজারে হানা দিয়েছিল পুরসভার একটি দল। ছিলেন পুরসভার আধিকারিকেরা এবং চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল যতন সরকার, কাউন্সিলার শুভজিত দে। শান্তিপুর ডাকঘর মোড় এলাকার বেশ কিছু হোটেল, ফুল, ফলের দোকান ঘুরে দেখেন। তবে সেখানে সে ভাবে কিছু মেলেনি। সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁরা যান বড়বাজার এলাকায়। সেখানে দু’টি দোকানে প্লাস্টিকজাত সামগ্রী পান তাঁরা। জরিমানা নেওয়া হয় সবার কাছেই। নতুন হাট, বড়বাজার, স্টেশন লাগোয়া বাজার এলাকায় হানা দিয়ে সাত জনের থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই মিহি প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে পুরসভা। প্রথম দিনে একাধিক জায়গায় ইতিবাচক ছবি দেখা গেছে। অনেকেই স্বেচ্ছায় প্লাস্টিক বর্জনে এগিয়ে এসেছেন, তবে সচেতনতা এবং প্লাস্টিক বর্জনে সদিচ্ছার অভাব যে রয়েছে এখনও, তাঁর প্রমাণও মিলেছে। তবে পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক বন্ধে আগামী দিনেও ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ হবে নানা বাজারে।
শান্তিপুরের বাসিন্দা পরিবেশকর্মী সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “নজরদারির যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনই সকলকেই সচেতন হতে হবে। সবাই মিলে এগিয়ে এলেই প্লাস্টিকের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।” পুরপ্রধান অজয় দে বলেন, “মানুষের থেকে প্লাস্টিক বন্ধে এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। যে দিন দেখব প্লাস্টিকের ব্যবহার আর শান্তিপুরে হচ্ছে না সেদিনই সব থেকে বেশি খুশি হব।”