Shiva Linga

শিবলিঙ্গ গড়লেন ঝুনু শেখ

ঝুনু জাত শিল্পী। এমনিতে রাজমিস্ত্রি, কিন্তু ছেনি-হাতুড়ির ঘায়ে তৈরি করতে পারেন অনবদ্য পাথরের কাব্য।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৮
Share:

কাজে মগ্ন ঝুনু। নিজস্ব চিত্রa

ঝুনু জাত শিল্পী। এমনিতে রাজমিস্ত্রি, কিন্তু ছেনি-হাতুড়ির ঘায়ে তৈরি করতে পারেন অনবদ্য পাথরের কাব্য। মায়াপুরের বামুনপুকুর অঞ্চলে এ হেন ঝুনু হত কয়েক মাস গভীর রাত পর্যন্ত বুঁদ হয়ে থাকতেন কাজে। তা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত ছিল না পরিচিতদের। কী এমন জিনিস তৈরি করছে লোকটা! উত্তর মিলেছে এতদিনে। গৌরীপট্ট সমেত এক নিখুঁত শিবলিঙ্গ গড়েছেন ঝুনু শেখ!

Advertisement

এলাকার রামকৃষ্ণ দেবনাথের বহু দিনের ইচ্ছা ছিল, নিজের বাড়ির মন্দিরে একটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর বাড়ির সেই মন্দির আগেই গড়েছিলেন ঝুনু। সেই মন্দিরের জন্য মনের মতো শিবলিঙ্গ কোথাও পাচ্ছিলেন না। বেশ কয়েক মাস খোঁজাখুঁজির পর বিফল মনোরথ রামকৃষ্ণবাবু এক দিন ঝুনুকে জানান, তাঁর চেনা কোনও ভাল পাথরের মূর্তির কারিগর থাকলে যেন জানান। তাঁকে দিয়ে মূর্তি বানাবেন।

ঝুনুর কথায়, “ যখন দেখলাম যে, উনি কিছুতেই মনের মতো শিব খুঁজে পাচ্ছেন না, তখন আমি ঠিক করে ফেললাম আমিই তৈরি করব। প্রথমে অবশ্য রামকৃষ্ণবাবুকে সত্যি কথাটা বলিনি। আশঙ্কা ছিল, উনি রাজি হবেন না। তাই বলেছিলাম, আমার এক পরিচিত পাথরের কারিগর শিবলিঙ্গ তৈরি করবেন।”

Advertisement

অনুমতি পেতেই পাথর খুঁজতে শুরু করেন ঝুনু। নদীর পাড় বাঁধানোর কালো বোল্ডার পছন্দ করে নিয়ে যান মায়াপুরের বাড়িতে। তৈরি করিয়ে নেন পছন্দ মতো কয়েকটি পাথর কাটার ছেনি। শুরু হয় মূর্তিগড়া। কাজ চলতে থাকে রাতের বেলা, সকলের চোখের আড়ালে। দেড় বছর পর যখন সব জানাজানি হয় তখন শুধু পালিশের কাজটুকু বাকি। রামকৃষ্ণ বাবু বলেন, “ আমি শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। পড়ে ওর বাড়িতে গিয়ে যখন শিবলিঙ্গ দেখলাম, চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি।”

কী করে শিখলেন পাথরের কাজ? ঝুনু জানান, বেশ কয়েক বছর আগে বৃন্দাবনে গিয়েছিলেন মন্দিরের কাজ করতে। সেখানে উত্তর ভারতের পাথর খোদাইয়ের কারিগরদের কাজ দেখে শিখেছিলেন। তা ছাড়া, নবদ্বীপে পোড়মাতলার ভবতারণ শিব মূর্তি আমার দেখা। ওই মূর্তির গড়নই আমি অনুসরণ করছি।”

ভিন্নধর্মের দেবতার মূর্তি গড়তে অন্য কোনও অনুভূতি হয়েছিল? ঘি দিয়ে একমনে শিবলিঙ্গের গায়ে পালিশ করতে-করতে ঝুনু শেখ উত্তর দেন, “কারিগরের ধর্ম তার কাজ। ”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement