—প্রতীকী ছবি।
টানাটানির সংসারটা আর টানতে পারছিলেন না শাহাদত আলি। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভিন রাজ্য পাড়ি দিয়েছিল ডোমকলের বঘারপুর রমনার শাহাদত আলি। কিন্তু ওই সময়ে নোটবন্দির কবলে পড়ে দেড় মাস কেরলে কাটিয়ে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। আর হাতাশা নিয়ে ঘরে ফিরে শুনেছিল তাদের জন্য মা মাটি মানুষের সরকার সাহায্য দিয়েছে। সমর্থন প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। ফলে নিয়ম মেনে ট্রেনের টিকিট দিয়ে টাকার আবেদন জানান প্রশাসনের কাছে। কিন্তু ঘটনার পর ২ বছর কেটে গেলেও তার অ্যাকাউন্ট কোনও টাকা ঢোকেনি। ডোমকল পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের সেলিম রেজা বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ২ দিন মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে দেখা করতে পারিনি। তবে আমি শাহাদতের জন্য আবারও যাব।’’
কিন্তু কেন শাহাদতের টাকা মিলল না? মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের দ্বারে ঘুরে উত্তর মেলেনি। শাহাদত অনেক কষ্টে আরটিআই করে তথ্য ঘেটে দেখেন তার নামে ৫০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। শাহাদতের দাবি, ‘‘ব্যাপারটা একেবারে ম্যাজিকের মত। আমার নাম আছে তালিকায়, অথচ বদলে গিয়েছে অ্যাকাউন্ট। জানতে পেরেছি ডোমকলের হিতানপুরের আব্দুল্লা সোহেল মামুন নামের এক ব্যাক্তির অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছে ওই টাকা।’’ তার অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু কর্মী আধিকারীকের সৌজন্যে ওই কেরামতি হয়েছে। যদিও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুল করে আব্দুল্লা সোহেল মামুনের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা চলে গিয়েছিল। পরে শাহাদত আবেদন করার ফলে বিষয়টি নজরে আসে। আর তার পরেই আব্দুল্লাকে বার কয়েক আবেদন জানানো হয়েছে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাতে সে রাজি না হওয়ায় আবারও টাকা ফেরত চেয়ে এবং তা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিস করা হয়েছে। ওই নোটিসের কথা আব্দুল্লা স্বীকার করলেও টাকা তার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে কি না তা নিয়ে কোনও কথা বলতে নারাজ সে। তার দাবি, আমি অসুস্থ ফলে আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে কি না সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে ঢুকলে কারা ঢুকিয়েছে কেন ঢুকিয়েছে সেটা তদন্ত করে দেখুক প্রশাসন। আমি চিঠি পেয়ে এসডিও অফিসে গিয়েও সেটাই বলে এসেছি প্রশাসনকে।
শুধু শাহাদত নয়, এমন একাধিক দুর্নীতি হয়েছে সমর্থনের টাকা নিয়ে। একই অভিযোগ এলাকার বাজিতপুর গ্রামের দেবজ্যোতি সান্যালের। তার কথায়, ‘‘সেই সময় পুরসভার ভোট না হওয়ার ফলে মহকুমাশাসক পুরসভার প্রশাসক ছিলেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন মহকুমা শাসক সহ তার দফতরের কর্মীরা জড়িত। গোপনে জানতে পেরেছি শ্রমিকদের নাম ঠিকানার বদলে কেবল অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক শ্রেণির আমলা। বাজিতপুরের গৌতম দাস নামে এক শ্রমিকের ক্ষেত্রে এমন হয়েছে।’’ কেবল আমলা নয় এই চক্রের সঙ্গে শাসক দলের জনা কয়েক নেতাও জড়িয়ে আছে বলেও দাবি। স্থানীয়দের কথায়, সেই সময়ে আমলা আর শাসক দলের নেতাদের যৌথ উদ্যোগেই ওই কারচুপি হয়। অভিযোগকারী শাহাদত আলির দাবি, ‘‘আব্দুল্লার ভাগ্নে সেই সময়ে শাসক দলের নেতা ছিল। তার হাত দিয়েই ওই টাকা আব্দুল্লার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে।’’ মহকুমা শাসক দিব্যা লোগনাথনকে ফোন করেও কোনও সাড়া মেলেনি।