সত্যজিৎ বিশ্বাস। — ফাইল চিত্র।
কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস হত্যা মামলায় বুধবার সাক্ষ্য দিলেন প্রথম তদন্তকারী অফিসার তাপস ঘোষ। বুধবার বিধাননগরের ময়ূখ ভবনে বিশেষ আদালতে বিচারক মনোজজ্যোতি ভট্টাচার্যের এজলাসে দু’দফায় শুনানি হয়।
সরকারি কৌঁসুলি অসীমকুমার দত্তের প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী জানান, তখন তিনি হাঁসখালি থানার বগুলা আউটপোস্টে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁকে তদন্তভার দেওয়া হয়। তিনি ঘটনাস্থল দেখে স্কেচম্যাপ তৈরি করেন। সুজিত মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডল ওরফে মিঠুন নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। হাঁসখালি-কৃষ্ণনগর রাস্তার ধারে ঝোপ থেকে উদ্ধার হয় একটি বন্দুক। পুলিশ হেফাজতে ধৃতদের জেরা করে ধৃত সুজিতকে নিয়ে গিয়ে তিনি আজানতলা থেকে আর একটি বন্দুক উদ্ধার করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি সুজিতের কথা মতো চাকদহ থেকে নির্মল ঘোষ নামে আরও এক জনকে ধরা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি সত্যজিতের জামাকাপড় ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহ করেন তিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুরের ডেবরা রাধামোহনপুর বাজার থেকে তিনি অভিযুক্ত অভিজিৎ পুন্ডারিকে গ্রেফতার করে হাঁসখালি থানায় নিয়ে আসেন। ওই রাতেই সিআইডি তাঁর কাছ থেকে তদন্তভার নেয়।
অভিযুক্তের আইনজীবী সুবীর দেবনাথ জানতে চান, সাক্ষী কখন তদন্তভার নিয়েছিলেন। সাক্ষী জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ২.১৫ মিনিটে। তিনি প্রথম ঘটনার কথা শোনেন রাত ৯টা নাগাদ। হাঁসখালি থানার ওসি বা অন্য পুলিশকর্মী যারা তাঁর তদন্তভার নেওয়ার আগে ঘটনাস্থলে যান, তাঁদের তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। রাত ২.৫০ মিনিটে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্কেচম্যাপ তৈরি করেন। তার আগে পে উল্লিখিত দু’টি বাড়ির মালিক প্রদীপ বিশ্বাস এবং আলতাফ শেখকে বা আর কাাাউকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। সেই সময়ে ঘটনাস্থলে তাঁর সঙ্গে কোন পুলিশকর্মীরা ছিলেন, এ দিন তা তিনি মনে করতে পারেননি।
অভিযুক্তের আইনজীবী জানতে চান, সাক্ষী যদি কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ না-করে থাকেন, তা হলে অভিজিৎ পুন্ডারির বন্দুক ফেলে যাওয়ার জায়গা হিসাবে স্কেচম্যাপে ‘এম’ চিহ্নিত স্থানটি কী ভাবে নির্দিষ্ট করলেন? আইনজীবী দাবি করেন যে পুলিশ, সিআইডি এবং রাজনৈতিক নেতাদের কথায় সাক্ষী মিথ্যা কথা বলছেন। সাক্ষী তা অস্বীকার করেন। তবে তিনি কখন মৃতদেহ দেখেছিলেন সে কথা এ দিন মনে করতে পারেননি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বা ময়নাতদন্তের চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি বলেও তিনি জানান। সত্যজিতের গেঞ্জি ও পাঞ্জাবি ছেঁড়া অবস্থায় মিলেছিল। কী করে তা ছিঁড়ল বা তাঁর জুতো কোথায় গেল, তা নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি বলে তিনি আদালতে স্বীকার করেন।
জেরার শেষে জানতে চাওয়া হয়, অভিজিৎ পুন্ডারিকে অন্য জেলা থেকে গ্রেফতার করতে যাওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের অনুমতিপত্র সাক্ষী দেখাতে পারবেন কি না। তিনি জানান, পারবেন না। অভিজিতের গ্রেফতারি ‘মেমো’-তে কোনও সাক্ষীর সই নেই এবং কেন নেই তার ব্যাখ্যাও নেই বলে তাপস ঘোষ স্বীকার করেন। আজ, বৃহস্পতিবার ফের তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।