থিমের ঠেলায় বদলেছে বাগদেবী

পোড়ামাতলা এখন প্রাচীন মায়াপুরে

বাগদেবী যে খোদ পোড়ামাকেও এ ভাবে টেক্কা দিতে পারেন, তা কল্পনাও করতে পারেনি কেউ। কিন্তু তেরো পার্বণের শহর নবদ্বীপে ক্রমশ জমজমাট হয়ে ওঠা সরস্বতীর থিম পুজোয় তেমনটাই ঘটেছে এ বার।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২১
Share:

যুবদলের মণ্ডপ প্রায় তৈরি। — নিজস্ব চিত্র

বাগদেবী যে খোদ পোড়ামাকেও এ ভাবে টেক্কা দিতে পারেন, তা কল্পনাও করতে পারেনি কেউ। কিন্তু তেরো পার্বণের শহর নবদ্বীপে ক্রমশ জমজমাট হয়ে ওঠা সরস্বতীর থিম পুজোয় তেমনটাই ঘটেছে এ বার।

Advertisement

গত ক’দিন ধরেই টোটোর পিছনে ঝুলছিল বিজ্ঞাপনটা। নজরে পড়েছিল অনেকেরই। ‘যুবদলের সরস্বতী পুজো দেখতে পোড়ামাতলায় চলুন’। কিন্তু নবদ্বীপের একেবারে উত্তরপ্রান্তের ক্লাব যুবদলের প্রতিমা পোড়ামাতলায় কী করে হবে! কেউ বুঝতেই পারছিলেন না। বোঝা গেল যুবদলে গিয়ে। প্রাচীন মায়াপুরের ক্লাবটির থিমই এ বার ‘পোড়ামাতলা’।

প্রায় পঞ্চাশ দিন ধরে ক্লাব প্রাঙ্গণে নিশ্চিদ্র ঘেরাটোপে একটু একটু করে নিখুঁত ভাবে তৈরি করেছেন নবদ্বীপ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বৃক্ষদেবী পোড়ামার মন্দিরপ্রাঙ্গণ। থিম ভাবনা এবং মূলশিল্পী ক্লাবেরই সদস্য গোপালচন্দ্র সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ুয়াদের মা থেকে পোড়ামা। তাই সরস্বতী পুজোয় পোড়ামাতলাই থিম। নির্মাণ দক্ষতায় থিমের পোড়ামা তলার সঙ্গে মূল মন্দির চত্বর যেন আসল-নকল একাকার হয়ে গেছে। সেই হাড়িকাঠ থেকে ভোগের দোকান। মাথায় প্লাস্টিকের ছাউনি থেকে বিজ্ঞাপনের বোর্ড, হুবহু এক রকম।

Advertisement

পুজো কমিটির সম্পাদক সৌরভ বসাক জানিয়েছেন, পুজোর ক’টা দিন মূল পোড়ামা মন্দিরের সামনে যাঁরা যে ভাবে ফুল বা ভোগের ডালি নিয়ে বসেন, এখানেও তাঁরাই বসবেন।

এ ভাবেই নবদ্বীপের উৎসব-ক্যালেন্ডারে নতুন সংযোজন সরস্বতী পুজো। পাড়ায়, স্কুলে বা গৃহশিক্ষকের বাড়িতে নিছক পাটকাঠি, সুতো, থার্মোকল, রঙিন কাপড় বা ফুলের টব দিয়ে শখের মণ্ডপসজ্জা নয়। রীতিমতো লাখ লাখ টাকার বাজেটে সরস্বতী পুজো। দু’আড়াই লাখ টাকার বাজেটের কম করে হাফ ডজন সরস্বতী পুজো শুধুমাত্র নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুরেই হচ্ছে। শহরের অন্যান্য এলাকাতেও সরস্বতীকে ঘিরে আড়ম্বর ক্রমশ বাড়ছে। কুড়ি-বাইশ ফুট উচ্চতার প্রতিমা, আকাশছোঁয়া প্যান্ডেল, সিকি মাইল লম্বা আলোকসজ্জা, সপ্তাহভর মেলা, ইলেকট্রিক নাগরদোলার সঙ্গে থিম।

সরস্বতী পুজো চিরকালই বাড়ি ছাড়া স্কুল-কলেজেই হতো। কয়েকটি ক্লাব দু’চার হাজার টাকার বাজেটে ক্লাব ঘরে পুজো করত। গৃহশিক্ষকতার রমরমার বাজার থেকে পুজো শুরু হয় কোচিংয়ে। সন্ধ্যায় গানবাজনার সঙ্গে ঘুঘনি কিংবা লুচি-আলুরদম। নবদ্বীপে সরস্বতী পুজোর রমরমা প্রথম শুরু হয়েছিল কয়েক দশক আগে শহরের উত্তরাঞ্চলে। ব্যাপক ধুমধাম করে সরস্বতী পুজো হত প্রাচীন মায়াপুরে। মাঝে সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফের সরস্বতীর জৌলুস ফিরেছে।

প্রাচীন মায়াপুরের ফ্রেন্ডস ইলেভেন ক্লাবের এ বার আটাশতম বর্ষ। তাদেরও বাজেট দু’লক্ষ টাকার বেশি। বিরাট মণ্ডপ। উদ্যোক্তাদের তরফে সুমন সাহা বলেন, “আমরা মেলারও আয়োজন করেছি। পাঁচ দিন ধরে চলবে। রোজ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান।” চোখে পড়ার মত আলোকসজ্জা ও মণ্ডপসজ্জা বুড়োশিবতলা ফ্রেন্ডস ক্লাব, ভিক্টর ক্লাবের। যোগনাথতলা বারোয়ারির এ বার বাজেট দু’লাখ ছুঁইছুঁই। বিশাল প্রতিমা। প্রতি দিন সন্ধ্যায় থাকছে নানা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান।

থিম ছড়িয়েছে স্কুলের পুজোতেও। আর সি বি সারস্বত মন্দির হাই স্কুলের পুজোয় থিম ‘ঢোলকপুর গ্রাম’। পুজোর দিন স্কুলের মাঠে ছুটে বেড়াবে ছোটা ভীম, কালিয়া আর ছুটকিও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement